Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কালের কারিগর -- ৪১


                                  



     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



         শুরু  হল  ধারাবাহিক উপন্যাস -- 












              কালের কারিগর
              

                          অর্ঘ্য ঘোষ  

                     (  কিস্তি -- ৪১ ) 


আর বাড়ি ফিরেও সেই রুম্পার কথা শুনেই চিন্তায় পড়ে যান ভুবনবাবু। বাড়ির দোরগোড়া থেকেই তিনি শুনতে পান সাধনা , ছন্দা আর রুম্পার সম্মিলিত হাসির শব্দ। বাড়ির ভিতরে পা রাখতেই ছুটে এসে ছন্দা ভুবনবাবুর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে ঘরে রেখে আসে। সবার কুশল জানার পর সাধনা স্বামীর হাতে গামছা এগিয়ে দেন। হাত-পা ধোয়ার পর 
স্ত্রীর হাতে গামছাটা ফিরিয়ে দিয়ে ভুবনবাবু জিজ্ঞেস করেন -- কি কারণে এত হাসাহাসি হচ্ছিল শুনি ?
তাদের কথার মাঝে ভুবনবাবু এসে পড়ায় একেই খুব অস্বস্তিতে পড়েছিল রুম্পা।তার উপরে ভুবনবাবুর প্রশ্নে সে ভীষণ লজ্জায় পড়ে যায়।তার চোখে মুখে উদ্বেগের ছাপ ফুটে ওঠে। সেটা চোখ এড়ায় না সাধনার। তাই হাত নেড়ে রুম্পাকে আশ্বস্ত করে স্বামীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন ---- সে এক কাণ্ড হয়েছে। শুনলে তুমিও না হেসে থাকতে পারবে না।
--- আগে কাণ্ডটা কি শুনি বলো।
---- কাল রুম্পাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিল।
---- এ আর নতুন কথা কি ? কয়েকদিন থেকেই তো আসছে। এবারে কি ফাইন্যাল হয়ে গেল নাকি ? 
---- আরে সবটা শোনই না।
---- আচ্ছা বলো।
---- বেশ কিছুদিন ধরেই তো পাত্রপক্ষের লোকেরা আসছে ,  চব্যচোষ্য লেহ্যপেয় খাচ্ছে আর তাদের সামনে সেজেগুজে বসতে হচ্ছে রুম্পাকে।প্রতিদিন ওইভাবে সঙ সেজে বসতে বসতে তিতিবিরক্ত হয়ে কাল পাত্রপক্ষের সামনে এক কাণ্ড করে বসে রূম্পা। বাবা-মায়ের অগোচরে ট্যারা চোখে তাদের দিকে তাকিয়েই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।আর যায় কোথায় ? পাত্রপক্ষ পাত্রী দেখবে কি, তাদের চোখই টেরিয়ে যায়। পরে খবর দেব বলে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচে।
স্ত্রীর কথা শেষ হতেই হো-হো করে হেসে ওঠেন ভুবনবাবুও। হাসি থামিয়ে একসময় বলেন , নিজের বিয়ে আটকাতে এমন ঘটনা ঘটানোর কথা গল্প- উপন্যাসেই পড়েছি।সেটা যে বাস্তবেও ঘটে তা এই প্রথম জানলাম।



             সেই শুরু , তারপর থেকে বাবা-মা মেয়ের বিয়ের জন্য যত তৎপর হয়ে ওঠেন , মেয়েও পাত্রপক্ষের সামনে কখনও টেরা চোখে তাকানো , কখনও খুঁড়িয়ে হেটে তাদের ঘোল খাইয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।ওইসব দেখার পরও যারা বিয়েতে আগ্রহী হয় তারা এমন পণ হাঁকেন যা রুম্পার বাবা মায়ের সামর্থ্যের বাইরে।এদিকে ওই করতে করতেই খুঁতে মেয়ে হিসাবে বদনাম রটে যায় রুম্পার। পাত্রপক্ষের আনাগোনা কমে যায়। ভুবনবাবু ভাবেন এ এক মন্দের ভাল হয়েছে। রুম্পার বাবাকে বুঝিয়ে বললে তো বুঝতে চাইবে না। এইভাবে ঠেকে যদি মনটা কিছুটা পরিবর্তন হয় তো হোক।পিকনিকের সময়টা না আসা পর্যন্ত কিছু করারও নেই। জয়ন্তবাবু তো তাকে কথা দিয়েইছেন , সেই সময় আরও অনেকেই আসবেন। সবাই চেষ্টা করলে নিশ্চয় রুম্পার বাবা-মাকে রাজী করানো যাবে।সেই জন্য শুরু হয় পিকনিকের প্রতীক্ষা। তারই মধ্যে সুখবর আসে চিঠিতে। সুধাদি জানিয়েছেন ,  প্রভাত শিক্ষা দফতরে একটি চাকরি পেয়েছে। অম্লানবাবুর তদ্বিরেই নাকি সেটা সম্ভব হয়েছে। এজন্য ভুবনবাবুকে কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেন নি সুধাদি। কিন্তু ভুবনবাবু ভালো করেই জানেন তিনি সুপারিশ না করলেও প্রভাত ওই রকম একটা চাকরি অনায়াসেই পেয়ে যেত।
সে যোগ্যতা তার রয়েছে। হয়তো কিছুদিন দেরি হত। নেহাৎ রুম্পার সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারটা ঝুলে রয়েছে বলেই সুপারিশটা তাকে করতে হয়েছে। তবে তার বিশ্বাস পরে প্রভাত আরও ভালো চাকরি পাবে। প্রভাতের চাকরি পাওয়ার খবরে স্বস্তি পান ভুবনবাবু। বর্তমান সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে এবারে সবদিক দিয়েই যোগ্য হয়ে উঠল প্রভাত। ভুবনবাবু অবশ্য চাকরি পাওয়াটাকেই একজন মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি বলে মনে করেন না। পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষকে প্রকৃত শিক্ষিত বলেও মনে করেন না। পুঁথিগত শিক্ষার জোরে চাকরি পাওয়া বহু মানুষ আছেন যারা সামাজিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের নীতিবোধ , মানবিকতা সর্বোপরি মানবিকতায় ধারে পাশেও আসে না।তবু সমাজের বৃহত্তর অংশের 
কাছেই চাকরি পাওয়াটাই জীবনের অন্যতম মোক্ষ হিসাবে বিবেচিত হয়। সেই ধ্যানধারণার বদল ঘটানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় তা ভালো করেই জানেন তিনি। তাই মাথা থেকে সেই চিন্তাটাও ঝেড়ে ফেলেন।  শুধু পিকনিকের দিনে কিভাবে প্রভাতের সঙ্গে রুম্পার বিয়েটা চূড়ান্ত করবেন সেই চিন্তায় পেয়ে বসে তাকে।



                                                 দেখতে দেখতে পিকনিকের জন্য নির্ধারিত দিনটিও এসে পড়ে।পিকনিকের আগেরই দিনই  রামপুরহাট থেকে মনোতোষের সঙ্গে মাকে নিয়ে পৌঁচ্ছে যায় প্রভাত। বর্ধমান থেকে আসেন অম্লানও। তাদের পৌঁছোনোর কিছুক্ষণ পরেই  জয়ন্তবাবুদের রিক্সাও গ্রামে ঢোকে। রুম্পাদের বাড়ি যাওয়ার পথেই তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ভুবনবাবুর।জয়ন্তবাবু আর ভোম্বলবাবুকে আড়ালে ডেকে ভুবনবাবু চুপি চুপি তাদের জানিয়ে দেন এখনই প্রভাতের পরিচয় দেওয়ার কোন দরকার নেই। যা হওয়ার তা পিকনিকে গিয়েই হবে। সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে রিক্সায় ওঠেন জয়ন্তবাবুরা।
আর ' কাল সকালে দেখা হচ্ছে ' বলে হাত নাড়তে নাড়তে বাড়ির ভিতরে ঢোকেন ভুবনবাবু। রান্নাঘরে তখন চা খেতে খেতে সাধনার সঙ্গে দিব্যি খোস গল্পে মেতে উঠেছেন সুধাদি। অম্লানও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।প্রভাতকে নিয়ে পাড়া ঘুরতে বেরিয়েছে মনোতোষ। তিনি রান্নাঘরে কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ছন্দা এক কাপ চা এনে তার হাতেও ধরিয়ে দেয়।চায়ে চুমুক দিতে দিতে সেই গল্পে যোগ দেন ভুবনবাবুও। সুধাদি তো সাধনার প্রশংসায় 
পঞ্চমুখ। সাধনার হাত ধরে তিনি বলেন , তোমার সামনে বলছি বলে বাড়িয়ে বলছি মনে কোর না , তোমাকে দেখার আগে বাড়িতে পা দিয়েই আমার মনে হয়েছে সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে। সাধনার মুখেও সুধাদির প্রশস্তি। সুধাদির হাত ধরে সাধনাও বলে , আপনাকে দেখেও আমার একই কথা মনে হয়েছে।
ভুবনবাবু মাঝখান থেকে ফোড়ন কাটেন , তা ভালো। আম ছালা এক হলো। আঁটি গড়াগড়ি খেল।
--- কি করবে বলো আঁটির কপালেই যে গড়াগড়ি খাওয়া লেখা রয়েছে। খাও এখন গড়াগড়ি। 
---- আমার আর গড়াগড়ি খেয়ে লাভ নেই। আমি এখন আসি।
অম্লানকে নিয়ে উঠে পড়েন ভুবনবাবু। তার এখন অনেক কাজ। আগে একবার করে সবাইকে বলা আছে। তবু আর একবার করে পিকনিকের জন্য সবাইকে বলতে হবে। নাহলে অভিমানে কেউ কেউ নাও আসতে পারেন। গ্রামের মানুষকে নিয়ে এই এক সমস্যা। পিকনিকটা যে সামগ্রিক ব্যাপার , কোন ভোজ নয় তা অনেকেই ভুলে যান। তাই যে আয়োজন করে তাকেই ভোজের মতোই  সবাইকে নিমন্ত্রণ করে বেড়াতে হয়।তাই সময় সময় দুই বন্ধুতে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন ভুবনবাবু। এবারের পিকনিক অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বড়ো হবে। সান্ধ্য আসরের সমস্ত বন্ধুরা তো আছেই, তার সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে রুম্পা আর তাদের আত্মীয়রা। তাদের তরফেও রয়েছে ছন্দাদের পরিবার ,  অম্লান আর সুধাদিরা। বলা হয়েছে ডাক্তারবাবুকেও।নেই কেবল ছন্দার গঙ্গাজল খুকীরা। তারা এবারে মামার বাড়িতে রয়েছে।তাই আয়োজনও বড়ো মাপের  করতে হবে।সান্ধ্য আসরের বন্ধুরা এলেই সেই কাজটা করতে চান তিনি।ততক্ষণে নিমন্ত্রণের কাজটা সেরে ফেলতে হবে তাকে। তাই একে একে সবার বাড়ি পৌঁছোন তিনি। সবাই বলে , আর বলতে আসার কোন দরকারই ছিল না। আমরা তো দিন গুনছিলাম। 
ডাক্তারবাবুর ডিসপেনসারি হয়ে বাড়ি মুখো হতেই বেলা গড়িয়ে যায়। ফিরতে ফিরতে অম্লানবাবু বলেন , পিকনিক তো নয় , তোর দেখছি বিয়ের মতো এলাহি ব্যাপার।
---- কি করব ভাই , সারাবছর যাদের সঙ্গে উঠা বসা তাদের কি করে বাদ দিই বল ? তবে এবারের পিকনিকটার সঙ্গে বিয়েরও একটা সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে বলতে পারিস। 
তারপর রুম্পা আর প্রভাতকে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথাটা বন্ধুকে খুলে বলেন ভুবনবাবু।সবকিছু শোনার পর অম্লানবাবু বলেন , এতক্ষণে প্রভাতের চাকরির ব্যাপারে তোর সুপারিশ করার বিষয়টি পরিস্কার হল।নাহলে তোকে তো জানি , খুব জরুরী না হলে তুই ওই ধরণের সুপারিশ সহজে করবি না। প্রভাতের চাকরি ব্যাপারে সাহায্য করতে পেরে এখন আমারও ভালো লাগছে। আমিও চেষ্টা করব রে ওদের বিয়েটা যাতে কালকেই ফাইন্যাল করে দেওয়া যায়। 





                         সেই বিষয়ে আলোচনা করতে করতেই বাড়ি ফেরেন দুই বন্ধু।তারপর স্নান খাওয়া সারতে সারতেই একে একে এসে পড়েন ভুবনবাবুর সান্ধ্য আসরের বন্ধুরা। তাদের সঙ্গে অম্লানবাবুকে নিয়ে বাজার করতে বেরিয়ে পড়েন ভুবনবাবু। পিকনিকের জন্য ভুবনবাবু কাউকে টাকা চান না। যে যা দেয় নেন। কারণ তার সান্ধ্য আসরের বন্ধুদের সবার আর্থিক অবস্থা সমান নয়। সমহারে টাকা দিতে হলে অনেকেই পিছিয়ে যাবে।তাদের বাদ দিয়ে পিকনিক করতেও মন উঠে না ভুবনবাবুর।তাই টাকার জন্য কাউকেই বাদ দেওয়া হয় না।যার যা সামর্থ্য তিনি তাই দেন।খেতের সবজি থেকে চাল, ডাল এমন কি জ্বালানী দেন অনেকে। তাতে যতটা হয় হবে , বাকিটা পুষিয়ে দেন ভুবনবাবু। এজন্য সারাবছর স্ত্রীর কাছে কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে রাখেন তিনি।
সান্ধ্য আসরের বন্ধুরা কেউ কেউ বলেন , মাস্টার প্রতিবছর নিজের পকেটের টাকা ভেঙে আমাদের নিয়ে যাওয়ার দরকার কি ? তার চেয়ে বরং এবার তোমারই ঘুরে এসো। তোমাদের কাছে পিকনিকের গল্প শুনেই আমাদের মন ভরে যাবে। ভুবনবাবু তাদের কথা কানেই তোলেন না।সবাইকেই প্রতিবছর কার্যত বগলদাবা করে নিয়ে যান। এবারও তার অন্যথা হয় না।এবারও তাদের গন্তব্য ধরণী পাহাড়। দুটি গাড়ি করে ভোর ভোর ধরণী পাহাড়ের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেন তারা। যেতে যেতেই তার মনে পড়ে যায় কয়েক বছর আগের কথা।সেবারও ধরণী পাহাড়েই পিকনিক হয়েছিল।সেই পিকনিকে তাদের সঙ্গে ছিল রাম। তারপর সেই ঘটনার পর থেকে আর রামের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই তাদের।সম্পর্কটা থাকলে আজ হয়তো রামও তাদের সঙ্গে থাকতে পারত। রামের কথা ভেবে আবার মনটা খারাপ হয়ে যায় ভুবনবাবুর। কিন্তু পাহাড়ে পৌঁচ্ছে চমকে যান তিনি।



                                ( ক্রমশ )



 নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


 দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস ------
  

                                    ( ১ ) 
                                  


                             ( ২) 





                                       

                       ( ৩ )

                                       
                            


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  

                      ( ৪ )

            



                          ( ৫ )

                                 ( খেলার বই )
         

                                                                                 


                      ----০----








No comments:

Post a Comment