Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কালের কারিগর -- ৪২



                                  



     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



         শুরু  হল  ধারাবাহিক উপন্যাস -- 












               কালের কারিগর
              

                             অর্ঘ্য ঘোষ  

                          ( কিস্তি -- ৪২ ) 



কিন্তু পাহাড়ে পৌঁছে চমকে যান তিনি। গতবার যে জায়গায় পিকনিক হয়েছিল সেই জায়গায় পৌঁছোতেই দেখেন তাদের আগেই জায়গাটি দখল করে নিয়ে পিকনিকের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে তাদেরই গ্রামের কুণালরা। ঝালর দেওয়া সামিয়ানা , রঙিন ছাতার নীচে বাহারি চেয়ার , বক্সে উত্তেজক গান, সব মিলিয়ে এক এলাহি ব্যাপার।চোখ ফেরাতেই দেখতে পায় গাড়ি থেকে স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে নামছে রাম।সৌজন্যের বশেই সে কুশল জিজ্ঞাসার জন্য মুখ খুলতে গিয়েই কার্যত সপাটে গালে একটা চড় খায়। রাম পট করে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে কুনালের সঙ্গে উচ্চস্বরে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে তাদের পিকনিকের এলাহি আয়োজন নিয়ে কথা বলতে শুরু করে দেয়। তার স্ত্রী আর মেয়ে  তাকে দেখেও যেন দেখতে পায় না। ভুবনবাবুর আর বুঝতে অসুবিধা হয় না তাদেরকে দেখানোর জন্য ওরাও আজকের দিনটাকেই  পিকনিকের জন্য বেছে নিয়েছে।তাই খুব অপ্রস্তুতে পড়ে যান তিনি।তার পা দুটো যেন গেঁথে যায়।চট করে সরেও আসতে পারেন না। রাম যাই ভাবুক না কেন , নিজেকে তার প্রতিপক্ষ হিসাবে ভাবতে খুব কষ্ট হয় তার। আগে জানলে তারাই বরং পিকনিকের দিনটা বদলে দিত , না হয় অন্য জায়গায় যেত।  স্বামীর ওই কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থাটা চোখ এড়ায় না সাধনার। আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে তাকে টেনে আনেন গাড়ির কাছে। আসতে আসতে তার কানে আসে তাদেরকে উপলক্ষ্য করে টিকাটিপন্নী ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেটা কান এড়ায় না ভুবনবাবুরও। তার মুখটা কেমন যেন হয়ে যায়। তাই দেখে মনে মনে রামবাবুদের উপর খুব রাগ হয় সাধনার। নিজেরা পিকনিক করতে এসেছিস,  তাই কর না বাপু। খুঁচিয়ে অন্যেকে আঘাত করে তাদের আনন্দটা বানচাল করার চেষ্টা কেন ?স্বামীর হাত ধরে সাধনা বলেন -- কান দিও না তো ওদের কথায়। ওদের কথা শুনে তুমি যদি মন খারাপ করে থাকো তাহলে যাদের সঙ্গে করে এনেছো তাদের মনের অবস্থাটা কেমন হয় একবার ভেবে দেখ দেখি। সবাই তো আনন্দ করতেই এসেছে। তুমি যদি শুধু শুধু ওদের কথা শুনে মনমরা হয়ে থাকো তাহলে তো যাদের এনেছো তাদের আনন্দটাও মাঠে মারা যাবে।ওরা এদিকটাই পিকনিক করছে করুক। আমরা বরং অন্যদিকে যায়। এখানে কি জায়গার অভাব ? 
স্ত্রী'র কথাটা মনে ধরে ভুবনবাবুর। সেইমতো সবাইকে গাড়িতে উঠিয়ে ডাইভারকে অন্যদিকে যাওয়ার নির্দেশ দেন।   মন্দিরের কাছেই তারাও পিকনিকের আয়োজন শুরু করে দেন। যে যার মতো করে সবাই আনন্দে মেতে উঠে। ভুবনবাবুর সব থেকে মজা লাগে রুম্পার বাবা- মাকে দেখে। তারা প্রভাত আর তার সুধাদির সঙ্গে দিব্যি  আলাপ পরিচয়ের পর গল্প জুড়ে দিয়েছেন। তারা জানতেও পারেন না ওই ছেলেটির সঙ্গেই তাদের মেয়ের মেলামেশা  রয়েছে। সেই মেলামেশা আটকাতেই মেয়েকে পরীক্ষা দিতে যেতে পর্যন্ত রাজী ছিলেন না তারা। এমন কি ওই ছেলের সংশ্রব এড়াতেই মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্যত্র বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন।সুধাদির অভিব্যক্তিও বোঝা যায় না। রুম্পার কাছে থেকে তার বাবা-মায়ের মনোভাবের বিষয়টি প্রভাত হয়তো জানলেও জানতে পারে। কিন্তু সুধাদি এখনও পর্যন্ত সেকথা জানেন বলে মনে হয় না। তাই সব কিছু জানার পর  ওদের উল্টো প্রতিক্রিয়া হবে কিনা ভেবে পান না ভুবনবাবু। পিকনিকের ব্যস্ততায় সাময়িক ভাবে সেই ভাবনা দূরে সরিয়ে রাখতে হয় তাকে।




                                              কিছুক্ষণের মধ্যে উনুন জ্বালিয়ে টিফিন তৈরি করে ফেলেন ভুবনবাবুর সান্ধ্য আসরের বন্ধুরা। প্রতিবছর রান্নার দায়িত্বটা তারাই সামলান। সেদিন আর মহিলাদের উনুনের ধারে পাশে যেতে হয় না। শুধু হাতে জল নিয়ে পাতার সামনে বসতে পারলেই হল। সেই জন্য পিকনিক নিয়ে মহিলাদের আগ্রহই বেশি থাকে। ভোজ কাজ ছাড়া হাত ধুয়ে খাওয়ার সুযোগটা তো তাদের ভাগ্যে খুব একটা জোটে না। তাই তারা এইদিনটাকে দারুন ভাবে উপভোগ করে।ছেলেমেয়েগুলো বৈচিত্রের স্বাদ পায়।এবারও তার অন্যথা হয় না।টিফিন খাওয়ার পরই ছেলেমেয়েগুলো কেউ কেউ খেলায় মেতে উঠে। কেউ বা পাহাড়ে ঘুরতে বেরোয়। আর মহিলারা খুলে বসেন গল্পের ঝাঁপি। যেন গল্পের লকগেট খুলে যায়। মহিলাদের ঝাঁপিতে যে কত গল্প জমা থাকে তার ইয়ত্তা নেই। সেই সময় তাদের সামনে দিয়ে সৌমেনের হাত ধরে অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ভাবে হেটে যায় রীণা।তাদের দেখে সুবিনয়ের স্ত্রী মনীষা বলে , দেখে বাঁচি না। নাহয় বিয়েই হবে তা বলে গুরুজনদের সামনে এইভাবে বেলেল্লাপনা করতে হবে ! সেতো আমাদের ছন্দার সঙ্গে মনোর 
বিয়ে হবে। তাই বলে ওরা পারবে কারও সামনে দিয়ে এইভাবে যেতে ? 
অমলের স্ত্রী বাসন্তী বলেন , তুমি কার সঙ্গে কার তুলনা করছ দিদি ? যাদের যা রুচি। শিক্ষাদীক্ষা বলেও তো একটা কথা আছে।
--- তা যা বলেছো দিদি। মেয়েটার বাবার কথা বলতে পারব না।ছেলেটার বাবা   বড়োলোক হতে পারে কিন্তু তারও তো চালচলন বিশেষ সুবিধার নয়। অনেক কথাই তো কানে আসে।
প্রসঙ্গটা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে দেখে সাধনা বলেন , বাদ দাও তো ওদের কথা। পরের কাসুন্দি ঘেটে আমাদের লাভ কি ? আনন্দ করতে এসেছি , এসো তাই করি।
তার কথায় সায় দিয়ে মনীষা বলে , ঠিক বলেছো দিদি। তা হ্যা গো দিদি, ছেলের বিয়ে লাগাচ্ছো  কবে ? এমনি করে আমাদের খাওয়াতে হবে কিন্তু। নমো নমো করে সেরে দিলে শুনব না।
---- না গো না ,  নমো নমো করে সারব কেন ? আমার একটা ছেলে, ছন্দাও বাবার একমাত্র মেয়ে। বিয়ে ধুমধাম করেই হবে। আর তোমাদের খাওয়াব না তো কাদের খাওয়াব ? তোমরা ছাড়া আমাদের আর আছে কে ? 
---- কিন্তু সেটা কবে হবে শুনি ? আমাদের যে আর তর সইছে না গো।
-----  এখন তো আঠারো বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আইন বিরুদ্ধ। ছন্দামায়ের আঠারো বছর পূর্ণ হতে দেরি আছে। আর জানোই তো তোমার দাদা প্রাণ থাকতে কোন বেআইনী কাজ করবেন না।
--- সে আর কি জানি না দিদি। আমাদের সুজনের বাবাই বলেন মাস্টার মশায়ের কাছে হাকিম নড়বে তবু হুকুম নড়বে না।
---- তবে মনোর বিয়ের আগেই তোমরা আর একটা বিয়ের ভোজ পেতে পারো।
---- আবার কার বিয়ে গো দিদি ? আমাদের রুম্পার নাকি ? দেখাশোনা তো চলছিল শুনছি। সব ঠিক হয়ে গিয়েছে নাকি? বলে মনীষা রুম্পার মায়ের দিকে তাকায়। রুম্পার মা মাধবী কোন জবাব দিতে পারেন না। কারণ রুম্পার কারসাজিতে পাত্রপক্ষের জবাব আর চাহিদা শুনতে শুনতে ততদিনে কিছুটা হত্যোদম হয়ে পড়েছে তারা। কিন্তু সেটা সবার সামনে প্রকাশ করতেও কুন্ঠা হয় তার। সাধনাও পড়েন দোটানায়। কি বলবেন তিনি ? তিনি তো প্রভাতের বিয়ের কথা বলতে চেয়েছিলেন। প্রভাতের বিয়ে তো রুম্পার সঙ্গেই হবে। কিন্তু সেটা তো সবার সামনে বলতে পারবেন না। আবার রুম্পার বিয়ে নয় বলাটাও মিথ্যা বলা হবে। তাই শেষ পর্যন্ত দুই তাল রক্ষার মতো করে বলেন , রুম্পার বিয়ে তো আছেই। আমি প্রভাতের বিয়ের কথা বলছিলাম। এরপর তো দিদি ছেলের বিয়েতে আমাদের নিমন্ত্রণ না করে পারবেন না। তখন তো আমাদের সব বরযাত্রী যেতে হবে গো। কি দিদি তাই তো ?
সুধাদি বলেন , নিশ্চয় আমার তো আর সাতকুলে কেউ নেই। তোমাদেরই গিয়ে সব কাজ কর্ম করতে হবে ভাই।




                   সবাই এক যোগে বলে ওঠেন , সে নিয়ে তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না দিদি। আমরাই সব সামলে দেব। তুমি কেবল বিয়ের দিনটা কবে বলো একবার।
---- দিন তো এখনও ঠিক হয় নি ভাই। তবে ভুবনকে বলেছি ভালো দেখে একটা মেয়ে পছন্দ করে দিতে। ভুবনও বলেছে ওর দেখা একটা মেয়ে আছে। এরপর ভুবন যা করবে তাই হবে।সুধাদির কথা শুনে রুম্পার মায়ের চোখে মুখে যেন আশার আলো জ্বলে ওঠে।   মাধবী মনে মনে ভাবে , তার রুম্পার সংগে বেশ মানাবে প্রভাতকে। সমন্ধ হলে বেশ ভালোই হবে। ছেলে চাকরি পেয়েছে , নিঝঞ্ঝাট সংসার। খুব সুখী হবে মেয়েটা। হয় না কোনক্রমে বিয়েটা ? খুব সংশয় হয় তার। চাকরি পাওয়া ছেলের নাগাল কি তারা পাবে ? পাত্রপক্ষ তো তারা কম দেখল না ! তবে মনে ভরসাও পান। ছেলের মা তো বলেই দিলেন ভুবনবাবু যা করবেন তাই হবে। মাস্টারমশাই রুম্পাকে নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করেন। তাকে ধরলে তিনি রুম্পার মুখ চেয়ে না করতে পারবেন না বলেই মনে হয় তার। ভুবনবাবুকে একা পেয়ে মাধবী কিছুটা সংকোচের সঙ্গে বলেন , মাস্টারমশাই সুধাদির ছেলেটার সঙ্গে আমাদের  রুম্পার সমন্ধ হয় না ?
ভুবনবাবু যেন এই প্রশ্নটার জন্যই প্রতীক্ষায় ছিলেন। তাই মনে মনে খুশী হন তিনি। কিন্তু সেটা মাধবীকে বুঝতে দিতে চান না। খুশী ভাবটা মনের মধ্যে চেপে রেখে বলেন , না হওয়ার কিছু নেই। তবে ছেলেটা সবে চাকরি পেয়েছে বটে কিন্তু ওদের বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ। জাতিতেও তোমাদের চেয়ে নিচু। তোমাদের তো ওই দুটোই অপছন্দের।
ভুবনবাবু যে তাকে খোঁচা দিচ্ছেন তা বুঝতে অসুবিধা হয় না মাধবীর। তাই মরমে মরে যায় সে। কিছুক্ষণ মুখ দিয়ে কথা সরে না তার। শেষে কোন রকমে বলেন, খুব শিক্ষা হয়েছে আমাদের।  অর্থ আর জাতের অহংকারও ঘুচেছে।এখন আপনি যা ভালো মনে করবেন তাই হবে।
মাধবীর কথা শুনে সন্তুষ্ট হন ভুবনবাবু। তার মনে হয় এবারের পিকনিকটা সবদিক থেকেই সার্থক হয়ে উঠল।  মনের ভাব গোপন করেই বলেন , আমি যা করব তাই হবে বললে কি আর হয় ? ছেলের মা এখানে আছেন , তুমি বরং সরাসরি তাকেই বল। তারপর আমরা তো আছিই।
ভুবনবাবুর কথা মতো এক ফাঁকে সুধাদেবীকেও একা পেয়ে কথাটা পারে মাধবী। অত্যন্ত অনুনয়ের সুরে বলে , দিদি আমার মেয়েটাকে আপনার পায়ে একটু ঠাই দিন। নিজের মেয়ে বলে বলছি না  আমাদের রুম্পা সংসার করার উপযুক্ত মেয়ে।
মাধবী না জানলেও রুম্পার সঙ্গে যে প্রভাতের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তা অজানা ছিল না সুধাদেবীর।তাই ছেলের সুখের কথা ভেবেই মনে মনে ওই প্রস্তাবে খুশিই হন তিনি। কিন্তু ভুবনবাবুর সঙ্গে আলাদা করে কথা না বলে কোন মত দিতে পারেন না।মাধবীরর হাত দুটো ধরে  বলেন , আমি তো ভাই এ ব্যাপারে ভুবনকেই সব দায়িত্ব দিয়েছি। এখন ওই যা করার করবে। ততক্ষণে ভুবনবাবুর পিছনে পিছনে সেখানে এসেছেন। হাজির হয়েছেন জয়ন্তবাবু , ভোম্বলবাবু , অম্লানবাবুরাও।ভুবনবাবুরা বিষয়টা জানতেন, বাকিরা সবকিছু শোনার পর বলেন , এতে আর দ্বিমতের কি আছে ? ছেলে-মেয়ে আমাদের চেনাশোনা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চারহাত এক করে দেওয়াই ভালো।
ভুবনবাবু সেই সময় রুম্পার বাবা-মায়ের দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করেন - তোমরা সবদিক ভেবে দেখেছো তো ? পরে আবার আক্ষেপ করবে না তো ? 
জবাবে দুজনেই বলেন, আক্ষেপ করার কোন জায়গাই নেই। এমন ভাগ্য ক'টা মেয়ের হয় ? 
---- এবারে তাহলে তোমাদের আসল কথাটা খুলেই বলি ?
--- আসল কথা ?
--- আসল কথাটা হলো -- বলে একটুক্ষণ থামেন ভুবনবাবু। আর রুম্পার বাবা-মায়ের চোখমুখে তখন কৌতুহলের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে। তাদের কৌতুহলটা জিইয়ে রেখে মুচকি হাসেন ভুবনবাবু।

                            ( ক্রমশ)



 নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


 দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস ------
  

                                    ( ১ ) 
                                  


                             ( ২) 





                                       

                       ( ৩ )

                                       
                            


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  

                      ( ৪ )

            



                          ( ৫ )

                                 ( খেলার বই )
         

                                                                                 


                      ----০----


No comments:

Post a Comment