Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কালের কারিগর - ৪৩


                              
     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



         শুরু  হল  ধারাবাহিক উপন্যাস -- 











               কালের কারিগর
              

                             অর্ঘ্য ঘোষ  


                           (  কিস্তি -- ৪৩  )
   


তাদের কৌতুহলটা জিইয়ে রেখে মুচকি হাসেন ভুবনবাবু। কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে মুখ খোলেন তিনি। মাধবীদের দিকে চেয়ে ধীরে ধীরে বলতে শুরু করেন , একদিন কিন্তু এই ছেলেটার সংগেই মেয়ের মেলামেশায় তোমাদের ঘোরতর আপত্তি ছিল।
--- মানে ? 
---- মানে প্রভাতই হোল তোমার সেই নিচু জাতের হাঘরে বাড়ির ছেলে।
---- ইস , কি লজ্জা কি লজ্জা!
--- তাই বলছি এখনও ভেবে দেখ সব কিছু জানার পর কি করবে এবার ?
--- কেন দাদা আবার লজ্জা দিচ্ছেন। এমনিতেই লজ্জায়  মাথা কাটা যাচ্ছে। কি ভুলই না ভেবেছিলাম এবার বুঝতে পারছি।
--- তোমাদের ভুল ভাঙানোর জন্যই আগে ওদের পরিচয় দিই নি। এখন বুঝতে পারছ তো দূর থেকে শোনা কথায় মানুষের বিচার করতে নেই। কারণ ওই দুটি বিষয় বাদ দিয়েও মনুষ্যত্বের মাপকাঠিতেই মানুষকে বিচার করা উচিত। 
--- সে কথা আজ মর্মে মর্মে বুঝতে পারছি। তাই তো লজ্জা রাখার জায়গা নেই আমাদের।
হঠাৎ সুধাদির হাত দুটো জড়িয়ে ধরে মাধবী।তারপর কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে , দিদি না জেনে আপনাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পুষে রেখেছিলাম। সে ভুল আমার ভেঙেছে। এখন আপনি বলুন আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছেন  তো ? 
সুধাদিও মোলায়েম স্বরে বলেন , না না তুমি ভুল কিছু কর নি ভাই। তোমার জায়গায়  থাকলে হয়তো আমিও এরকমই করতাম। সব বাবা মা'ই চায় তাদের মেয়ে ভালো ঘর - বরে পড়ুক।
---- ভালো ঘর বরের ভুল আমার ভেঙে গিয়েছে দিদি।
---- ভুল যখন স্বীকার করে নিচ্ছ তা হলে তো তোমাদের মাসুল দিতেই হয়।
---- বলুন কি মাসুল দিতে হবে আমাদের ?
---- তোমাদের মেয়েটিকে তাহলে আমায় দিতে হবে। আমি তাকে আমার ঘরের লক্ষ্মী করে নিয়ে যাব।
--- এতো আমার পরম সৌভাগ্য দিদি। আপনি যেদিন বলবেন সেদিনই আমরা ওদের চার হাত এক করার ব্যবস্থা করব। 
---- তোমাদের যদি আপত্তি না থাকে তো আজই আমি মাকে আমার আর্শিবাদ করে যাব। আবার কবে আসা হবে তার ঠিক নেই। চাইলে তোমরাও আজ আমার ছেলেকে আর্শিবাদ সেরে নিতে পারো।
---- আজই ? 
---- কেন কোন অসুবিধা আছে ?
মাধবী কিছু বলার আগে ভুবনবাবুরা সমস্বরে বলে উঠেন -- না, না অসুবিধা কিসের ?
পিকনিকের পরই তো আর্শিবাদ পর্বটা সেরে ফেলতে পারি আমরা। কাছেই মন্দির রয়েছে , সেখানে বিয়ে পর্যন্ত দেওয়া হয়। তাই মন্দিরে অনায়াসেই আর্শিবাদটাও সেরে নেওয়া যাবে।
কথাটা মাধবী আর সুধাদেবী উভয়েরই মনোপুত হয়। কিন্তু তবু খুঁতখুঁতানি যায় না মাধবীর। সেটা লক্ষ্য করেই ভুবনবাবু বলেন , কি হলো আবার , তোমার দোলাচল কাটে নি মনে হচ্ছে।
--- আসলে আর্শিবাদ করার মতো প্রস্তুতি নিয়ে তো আসি নি।
--- তাতে কি হয়েছে ? আর্শিবাদ -- আর্শিবাদ। মণিমাণিক্য দিয়ে করতে পারো আবার শুধু ঠাকুরের প্রসাদী ফুল দিয়েও করতে পারো। অন্তরের আর্শিবাদটাই তো সব থেকে দামী। তারপরেও যদি তোমার মনের খুঁতখুঁতানি না যায় তাহলে তুমি বরং বাকিতে আর্শিবাদ কর। তারপর ওদের বাড়ি গিয়ে সুদ সহ সেই ধার মিটিয়ে দিয়ে আসবে।




                   ভুবনবাবুর কথা শুনে সবাই হেসে ওঠেন। মাধবীও আর আপত্তি করতে পারেন না।মুহুর্তের মধ্যে সবাই জেনে যায় কথাটা। ঠিক হয় খাওয়া দাওয়ার পর সবাই মন্দিরে যাবেন। একসঙ্গে ঠাকুর দেখাটাও হয়ে যাবে সবার।সবাই তাই ছেলেমেয়েগুলোর ফেরার অপেক্ষায় থাকে।  প্রভাত আর রুম্পাকে সারপ্রাইজ দিতে আগে থেকে কিছুই বলা হবে না বলে ঠিক করেন সবাই। একেবারে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে আর্শিবাদের আগের মুহুর্তে বলা হবে তাদের। রান্না শেষ হওয়ার মুখে হই হই করে ফেরে ছেলেমেয়ের দল। দ্রুত শুরু হয়ে যায় খাওয়া দাওয়া। ছেলেমেয়েরা ছাড়া অন্যান্যদের তখন মন পড়ে আছে মন্দিরের দিকে। খাওয়া দাওয়ার পর গাড়ি ছোটে মন্দির অভিমুখে।  তাড়াহুড়ো করে পিকনিক শেষ করে সবার মন্দিরে যাওয়ায় আগ্রহ দেখে ছন্দারা কিছুটা আশ্চর্যই হয়। অন্যান্যবার তো খাওয়া দাওয়ার পর নাচ, গান, আবৃত্তি আর গল্পে মেতে ওঠে সবাই। তখন সময়টা শেষ হয়ে গেলেই তাদের মন খারাপ হয়ে যায়। বাড়ি ফিরতে ইচ্ছেই করে না। কিন্তু এবার কি এমন হল যে সবার মন মন্দিরের প্রতি ঢলে পড়ল ? প্রভাতদা আর তার মায়ের জন্যই মন্দিরে যাওয়া হচ্ছে বলে মনে হয়  ছন্দাদের।তাই কেউ আর বিষয়টি নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করে না। গাড়িতে যেতে যেতেই গানের লড়াইয়ে মেতে ওঠে তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি দুটো মন্দিরের অদুরে গিয়ে থামে।সবার আগে গাড়ি নেমে পড়েন ভুবনবাবু। বাকিরা নামার আগেই তিনি দ্রুত মন্দিরের দিকে এগিয়ে যান। গাড়ি থেকে নামতে নামতেই ছন্দা দেখতে পায় কাকু তাদের সেই পুরোহিত দাদুকে প্রণাম করেতে যেতেই তিনি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ছন্দার মনে পড়ে যায় মন্দিরে প্রণাম নেন না উনি। ছন্দার নজরে পড়ে কাকু গাড়ির দিকে আঙুল তুলে কি যেন বলছেন তাকে। পুরোহিতদাদুও  অভয় দেওয়ার ভঙ্গিতে হাত নাড়ছেন। সবাই মন্দিরের কাছে পৌঁছোতেই ছন্দা আর মনোতোষকে দেখে পুরোহিত ভুবনবাবুর উদ্দেশ্যে বলেন -- এই দুটিকে তো আমি চিনি। এদেরই বুঝি ---- -- ?
পুরোহিতকে কথা শেষ করতে দেন না ভুবনবাবু। দ্রুত বলে ওঠেন --- না না, ওদের এখন দেরি আছে। আজ এই দুজনের ব্যবস্থাটা আপনি করে দেন ঠাকুরমশাই।
তারপর হাতের ইশারায় রুম্পা আর প্রভাতকে দেখান তিনি। সেটা লক্ষ্য করে রুম্পারা খুব আশ্চর্য হয়ে যায়।ছন্দারাও কম আশ্চর্য হয় না। তারা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়া করেন। সেটা লক্ষ্য করে ভুবনবাবুর মনে হয় আর ওদের অন্ধকারে রাখা ঠিক হবে না। ওরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসে ঠিকই , তবু ওদেরও একটা মত নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ারও একটা ব্যাপার আছে। তাই রুম্পাদের দিকে চেয়ে ভুবনবাবু বলেন , আমরা আজ তোমাদের বিয়ে চূড়ান্ত করেছি। সেইজন্য আজ এই মন্দিরে তোমাদের আর্শিবাদেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তোমাদের কিছু বলার আছে ?




                   কথা বলবে কি রুম্পা যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারে না। মা কি করে এটা মেনে নিল ভেবে পায় না সে। একই অবস্থা প্রভাতেরও। মনে মনে খুব খুশী হয় দুজনে। এতদিন তো এটাই চেয়ে এসেছে তারা। কিন্তু সবার সামনে মুখ ফুটে সেই কথাটা কি করে বলবে তারা ? তাই তারা একে অন্যের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।তাই রুম্পা ভাবে প্রভাত বলুক, আর প্রভাত ভাবে রুম্পা বলুক। কিন্তু কারও মুখেই আর কথা ফোটে না। শুধু অপলক দৃষ্টিতে একে অন্যের মুখের দিকে চেয়েই থাকে। শেষ বিকেলের গোধুলি বেলায় তখন দুজনের চোখে মুখেই ফুটে ওঠে অনুরাগের ছাপ।  তাদের মনের ভাবটা বুঝতে অসুবিধা হয় না ভুবনবাবুর।
তাদের লজ্জা কাটাতে তিনি বলেন , ঠিক আছে তোমাদের আর কিছু বলতে হবে না।  এখন এসো সবাই। বলে মন্দিরের চাতালের দিকে এগিয়ে যান তিনি। বাকিরাও তাকে অনুসরণ করে।ততক্ষণে  কাঁসার থালায় চলে এসেছে ধান - দূর্বা, সন্দেশ আর শঙ্খ। শঙ্খ বাজানোয় ছন্দার সুনাম রয়েছে, তাই শঙ্খটা সে'ই হাতে তুলে নেয়।প্রভাত আর রুম্পাকে পাশাপাশি আসনে বসানো হয়। পুরোহিতমশাই প্রথমে ঠাকুরের প্রসাদী ফুল ওদের মাথায় ছুঁইয়ে আর্শিবাদ করেন। তারপর সুধাদেবী তার হবু বৌমাকে ধান দূর্বা দিয়ে আর্শিবাদ করার পর নিজের গলার হারটা খুলে পরিয়ে দেন তার গলায়। দেখাদেখি একই ভাবে মাধবীও নিজের গলার হার পরিয়ে  দিয়ে আর্শিবাদ করেন প্রভাতকে। ছন্দার ঘন ঘন শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দির চত্বর। আর্শিবাদ পর্ব শেষ হতেই একে একে পুরোহিত মশাইয়ের কাছে বিদায় নিয়ে গাড়িতে ওঠে। সব শেষে ছন্দা আর মনোতোষ এগিয়ে যেতেই তাদের দুজনকে দুহাত দিয়ে বুকে টেনে নেন তিনি। পরম স্নেহে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন -- তোমাদের এমনটা কবে হবে ভাই ? 
একটু দূরেই সবাই দাঁড়িয়ে আছে। তাই তারা কেউ কিছু বলতে পারে না। কেবল আবেশ ভরা দৃষ্টিতে একে অন্যের দিকে চেয়ে থাকে দুজনে। তাদের মুখের ভাব দেখেই বিষয়টি উপলব্ধি করে পুরোহিতমশাই বলেন , এই দেখ, ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে আমিই তোমাদের কেমন বোকার মতো প্রশ্ন করে ফেললাম। সবই তো তারই ইচ্ছা। তিনি যা ঠিক করে রেখেছেন তাই-ই তো হবে। আমরা সে কথা ভুলে গিয়ে শুধু আকুলিবিকুলি করে মরি। নাহলে পিকনিক করতে এসেই ওদের আর্শিবাদ হয় ? এটাও যে উনিই ঠিক করে রেখেছিলেন। তাই তো সবাইকে টেনে এনেছেন  এখানে। 
বলেই হাত জোড় করে কপালে ঠেকান পুরোহিত মশাই। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুম্পারাও গাড়িতে গিয়ে ওঠে। ততক্ষণে ধরণী পাহাড়ের মাথায় সূর্য পাটে যেতে বসেছে। ফেরার পথেই তারা দেখতে পায় তখনও বক্সের উত্তেজক গানের সঙ্গে সৌমেন-রীনারা সবাই চটুল ভঙ্গীতে নেচেই চলেছে। তাদের বাবা-মায়েরাও হাততালি দিয়ে সমানে তাদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন। সেটা চোখে পড়তেই কেমন যেন আনমনা হয়ে পড়েন ভুবনবাবু। স্বামীর ভাবান্তর নজর এড়ায় না সাধনার। তাই তিনি ছন্দাকে উদ্দেশ্য করে বলেন -- ধর না মা সেই গানটা --গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভুলাই রে - - - - - - - - ।
মুহুর্তের মধ্যেই ছন্দার গলায় খেলে যায় সুরের মুর্চ্ছনা। ছন্দাকে জড়িয়ে ধরে গলা মেলান সাধনা। একে একে অন্যদের সঙ্গে সেই কোরাসে যোগ দেন ভুবনবাবুও। তখন আর শোনা যায় না চটুল গানের শব্দ।

                                                         ( ক্রমশ )



 নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


 দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস ------
  

                                    ( ১ ) 
                                  


                             ( ২) 





                                       

                       ( ৩ )

                                       
                            


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  

                      ( ৪ )

            



                          ( ৫ )

                                 ( খেলার বই )
         

                                                                                 


                      ----০----




No comments:

Post a Comment