Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কালের কারিগর -- ৭৪




     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



         শুরু  হল  ধারাবাহিক উপন্যাস -- 











             কালের কারিগর
              


                       অর্ঘ্য ঘোষ


                   (  কিস্তি -- ৭৪ ) 



কিন্তু ডুবন্ত মানুষ কিছু না পেলে খড়কুটো ধরেও বাঁচতে চায়।ছন্দার নিজেকে খুব অসহায় লাগে।ঠাকুমা তো কবেই গত হয়েছেন।শয্যাশায়ী বাবাকে নিয়ে মায়ের তো দম ফেলার ফুরসৎ নেই।তাই বিপদের দিনে তার পাশে মেয়েটা ছাড়া আপনার জন বলতে কেউ নেই।গ্রামের মানুষজনও দূরে সরে গিয়েছে।এই পৃথিবীতে সে যেন একা।অথচ মনোতোষদের পরিবার বংশ পরম্পরা ধরে মানুষের বিপদে আপদে পাশে থেকেছে সেই ছোট্ট থেকে দেখে আসছে সে।আজ তাদের বিপদেই কেউ নেই।মেয়েকে নিয়েই তাকে এই লড়াইটা লড়তে হবে।মনে মনে সেই প্রস্তুতিই নেয় ছন্দা।কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবেই তার সাহার্যে এগিয়ে আসে দুজনের হাত। সব শুনে ভোম্বল কাকা তৎপড়তা শুরু করে দেন।তার বয়েস হয়েছে , কিন্তু  বিপদের গুরুত্ব বুঝে সব তুচ্ছ করে তিনি তৎক্ষনাৎ হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।জয়ন্তবাবু আজ ইহলোকে নেই , কিন্তু সব শুনে এগিয়ে আসে তার ছেলে সঞ্জয়। সে'ও রক্ত দিতে চায়। সে'ও ছন্দাকে আশ্বস্ত করতে বলে ,  কোন চিন্তা করবেন না , আমরা আছি। সব ঠিক হয়ে যাবে।ওদের কথা শুনে বুকে একটু বল পান ছন্দা।তাদের নিয়েই হাসপাতালে পৌঁছোন তিনি।তাদের দেখেই সেই নার্সটি ফের তাড়া লাগান -- রক্তের ব্যবস্থা হল ? কই ডোনার এনেছেন ?
ছন্দা ভোম্বলবাবুদের দেখান। ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষার জন্য সঙ্গে সঙ্গে তাদের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়।মেয়ে সহ পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা দেন ছন্দা নিজেও।কিন্তু সঞ্জয় ছাড়া কারও সঙ্গে মনোতোষের রক্তের গ্রুপ মেলে না।অথচ অপারেশানের জন্য আরও এক জনের রক্ত এখনই প্রয়োজন।ফের ছোটাছুটি শুরু করে দেন ভোম্বলবাবু।কিন্তু প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্তের ডোনার মেলে না।এ সময় সূর্যর কথা খুব মনে পড়ে ছন্দার। ওর আর মনোতোষের রক্তের গ্রুপ এক। কিন্তু কোথাই সে এখন ? সে নিজেই কি অবস্থায় আছে কে জানে ? কথাটা ভোম্বলকাকাকে বলতেই তিনি সূর্যের খোঁজ খবর শুরু করে দেন।একে-তাকে ধরে জানা যায় সে হাসাপাতালেরই প্রিজনার সেলে ভর্তি আছে। সেখানেই ছুটে যান সবাই।গিয়ে দেখেন সারা গায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় ছাদের দিকে ভাবলেশহীন চোখে চেয়ে রয়েছে সূর্য।ছন্দা গেটের কাছে গিয়ে ডাকতেই সে হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কান্নার দমকে কথা বলতে পারে না।ছেলেকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে মাও কেঁদে ফেলেন। কিন্তু ছন্দার কাঁদবারও অবকাশ নেই। জীবন মৃত্যুর সীমানায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মনোতোষ। ছেলের রক্তই তার জীবন ফেরাতে পারে। তাই নিজেকে সামলে সে বলে , বাবু তোর বাবাকে বাঁচাতে রক্ত লাগবে। তুই এই অবস্থায় রক্ত দিতে পারবি ?
---- হ্যা হ্যা, যত রক্ত লাগে নাও।আমার শরীরের সব রক্ত নিয়ে নাও।কেবল আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও।আর আমার চাকরি চাই না।আমি কেবল বাবাকেই , শুধু বাবাকেই চাই। 
বলে ফের আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ে সূর্য। আর তার রক্ত সংগ্রহের জন্য তারা ছুটে যান সেই নার্সের কাছে।কিন্তু সব শুনে নার্স জানিয়ে দেন প্রিজনার সেলে ভর্তি থাকা কারও রক্ত তারা নিতে পারবে না।তাই সূর্যের রক্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও আইনী জটিলতায় তা নেওয়া খুব সহজ হয় না। ভোম্বলকাকাই  বিস্তর দৌড় ঝাঁপ করে শেষ পর্যন্ত পুলিশ - প্রশাসনের অনুমতি আদায় করেন। তারপরই সূর্যর রক্ত নিয়ে মনোতোষের অপারেশান হয়। 





                                       দিন পনেরো যমে মানুষে টানাটানির পর মনোতোষ একটু সুস্থ হয়ে ওঠেন।এই কয়েক দিন চোখের পাতা এক করতে পারেন নি ছন্দা। দিনের বেলা মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল চত্বরেই পড়ে থাকতেন। একবার প্রিজনার সেলে গিয়ে ছেলেকে দেখে আসতেন।একবার ছুটে যেতেন স্বামীর বেডের পাশে। রাতে আশ্রয় নিতেন ভোম্বলকাকার বাড়িতে। আর কোনদিন ভোম্বলকাকা ,  কোনদিন সঞ্জয়ের রাত কাটত হাসপাতালে।অনাত্মীয় মানুষেরাও যে এত আন্তরিকতা হয় তা ভোম্বলকাকা আর সঞ্জয়কে না দেখলে কোনদিন জানতে পারতেন না ছন্দা। তারা পাশে না দাঁড়ালে মনোতোষকে হয়তো বাঁচানোই যেত না। শুধুই কি মনোতোষ ? সূর্যর চিকিৎসা , জামিনের আবেদনের জন্য উকিলের সঙ্গে কথা বলা , সবেতেই তাদের কাছে ঋণের অন্ত নেই তার। ভোম্বলকাকার তৎপরতার জন্যই সূর্যও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে।শুধু কি তাই ? সঙ্গে আনা টাকাগুলো তো জলের মতো কবেই খরচ হয়ে গিয়েছে।হারটা বিক্রির জন্য ভোম্বলকাকার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ছন্দা। কিন্তু সেটা বিক্রি করতে দেন নি ভোম্বলকাকা। নিজের কাছে রেখে দিয়ে বলেছেন , এটা এখনই বিক্রি করতে হবে না। আপাতত যা খরচ হচ্ছে লিখে রাখছি , মনোতোষ সুস্থ হয়ে উঠুক, সূর্য জেল থেকে ছাড়া পাক তারপর দেখা যাবে।যদি টাকার ব্যবস্থা হয় ভালো , নাহলে তখন না হয় হার বিক্রি করেই টাকা দিও।ভোম্বলকাকার কথা শুনে চোখ ভিজে যায় ছন্দার।যাদের  সাহার্যের আশায় তারা মা মেয়ে এই শহরে ছুটে এসেছিলো তারা মুখ ঘুরিয়ে নিল , কিন্তু যাদের নাম সেই সময় মনেও আসে নি তারাই সাহার্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন।  আজকের দিনে এমনটা ভাবা যায় ? শুধু  ভোম্বলকাকাই নন , তার বাড়ির লোকেদেরও কি কম আন্তরিকতা ? ভোম্বলকাকার স্ত্রী সরলাকাকী তার নামের মতোই সরল সাধাসিধে মানুষ। তাদের সঙ্গে ফলমূল নিয়ে কতবার যে মনোতোষ আর সূর্যকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন তার ঠিক নেই। সঞ্জয়ও তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছে। কিন্তু তাই নিয়ে রুম্পাদিদের সঙ্গে ওদের দুরত্ব তৈরি হতে পারে বলে তারা যায় নি।সঞ্জয়কেও সেটা তারা বুঝিয়ে বলেছে। তারপর থেকে আর জোরাজুরি করে নি সে। তবে নিয়মিত হাসপাতালে আসে। যখন যেভাবে পারে সাহার্য করে। সে দিন হাসপাতাল আসার পথে মা-মেয়েতে সেই কথাই আলোচনা করতে করতে আসছিল। সুস্মিতা বলে -- মা ভোম্বলদাদুরা কি ভালো না ?
--- ওদের মতো ভালো মানুষ সচরাচর দেখা যায় না। ওরা না থাকলে আমরা তো তোর বাবাকে সুস্থ করে তুলতেই পারতাম না। এখন ভালোয় ভালোয় ছেলেটাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে পারলেই বাঁচি।ছেলেটার কি হবে কে জানে ? ওর  জন্য দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারি না জানিস।
---- মা তুমি অতো দুশ্চিন্তা কোর না। ভোম্বলদাদু তো উকিলবাবুর সঙ্গে কথা বলেছেন। উকিলবাবুও বলেছেন , কেউ কোন অভিযোগ করে নি।পুলিশ নিজে থেকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ এনেছে।কিন্তু যাকে খুনের চেষ্টা করার অভিযোগ তোলা হয়েছে তিনি যদি অভিযোগ অস্বীকার করেন তাহলে মামলা খারিজ হয়ে যাবে।বাবা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সেটা করলেই তো দাদা ছাড়া পেয়ে যাবে।
--- তাই যেন হয় ঠাকুর , তাই যেন হয়। বলে হাত জোড় করে কপালে ঠেকান ছন্দা।




                                ঠিক হয়েছে মনোতোষকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিলে আপাতত সবাই ভোম্বলকাকার বাড়িতেই উঠেবেন। সেখান থেকেই উকিলের কাছে গিয়ে সূর্যকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন।তারপর সূর্যকে নিয়েই তারা এক সঙ্গে বাড়ি ফিরবেন। সেই মতোই উকিলের সঙ্গে সমস্ত কথা বলে রেখেছেন ভোম্বলকাকা। এখন মনোতোষ হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেই হয়। সেই প্রতীক্ষাতেই দিন কাটে। ১৯ দিনের মাথায় প্রতীক্ষার অবসান হয়। ছুটি হয় মনোতোষের। ছুটি পেয়েই মনোতোষ ছেলের খোঁজ করেন। নিজে অসুস্থ থাকার  সময়ও প্রতিদিন ছেলের খোঁজ নিয়েছেন তিনি। ছন্দা তাকে সব বলেছেন। বলছেন রক্ত দেওয়ার কথাও। ছেলের বন্দীদশার কথা ভেবে খুব উতলা হয়ে পড়তেন তিনি। সূর্য এখনও প্রিজনার সেলেই রয়েছে। সুস্থ হয়ে গেলেও ভোম্বলকাকার সুপারিশের জোরেই সেটা সম্ভব হয়েছে।জেলের পরিবেশে আরও মানসিক অবসাদের স্বীকার হয়ে পড়তে পারে , অন্য কয়েদীরা ওকে মারধোর করতে পারে ভেবেই ভোম্বলকাকা তার চেনাশোনা পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের ধরে ব্যবস্থাটা করেছেন।সত্যি কথা বলতে কি প্রিজনার সেলে থাকায় সূর্যর শরীর তো বটেই সেই পাগলামি ভাবটাও যেন সেরে গিয়েছে বলে মনে হয় ছন্দার। বাবাকে দেখে যেন তারই  বহ্বিপ্রকাশ ঘটে।মনোতোষকে দেখেই রেলিং দেওয়া গেটের কাছে ছুটে আসে সূর্য। তারপর রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে যতটা সম্ভব বাবার শরীরে হাত বোলাতে বোলাতে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে , বাবা  তুমি পুরোপুরি ভালো হয়ে গিয়েছো তো ? তোমার আর কোন কষ্ট নেই তো বাবা ?  আমি তোমার অধম ছেলে। আমাকে তুমি চরম শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করো।আমি জেলেই পচে পচে মরতে চাই।এই মুখ আর আমি কাউকে দেখাতে চাই না। 
নাগাড়ে কেঁদেই চলে সূর্য। বাবাও ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না।খুব ইচ্ছে করে আত্মজকে বুকে জড়িয়ে ধরে ওর মনের গ্লানিটা মুছিয়ে দেয়। কিন্তু ছেলের কাছে তার পৌঁছোনো হয় না। মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আইনের রেলিং।



                        ( ক্রমশ )


নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


 দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস ------

                                    ( ১ )
  

                                  
                               

                             ( ২) 





                                       

                       ( ৩ )

                                       
                            


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  

                      ( ৪ )

            



                          ( ৫ )

                                 ( খেলার বই )
         

                                                                                 


                 ----০---





No comments:

Post a Comment