Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কালের কারিগর -- ৭৬




     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



         শুরু  হল  ধারাবাহিক উপন্যাস -- 











          কালের কারিগর
              


                      অর্ঘ্য ঘোষ

                     (  কিস্তি -- ৭৬  ) 




পরদিন রায় দেওয়ার ঘোষণা করে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান বিচারক।রাতটা চরম উদ্বেগে কাটে মনোতোষদের। সকালেই কোর্টে যাওয়ার আগে সরলাকাকীর সঙ্গে গিয়ে সংকটেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে আসেন ছন্দা।তারপর যথা সময়ে আদালতে গিয়ে ছেলের মাথায় প্রসাদী ফুল ছোঁওয়াতে লকআপের কাছে চলে যান। বটতলা থেকেই মনোতোষ দেখতে পান পুলিশগুলো আজ আর ছন্দাদের আটকায় না।কি যেন জিজ্ঞেস করে তাদের।তারই মধ্যেই সেখানে গিয়ে পৌঁছোন ভোম্বলকাকা। কালকের মতোই পকেট থেকে কয়েকটা টাকা বের করে একটা পুলিশের হাতে দেন তিনি।আর তার পরেই দাঁত বের করে হাসতে দেখা যায় পুলিশগুলোকে। ভোম্বলকাকা ওদের জন্য চা আনতে চলে যান। মনোতোষ বুঝতে পারে তখন দেঁতো হাসি হেসে  ভোম্বলকাকাকে চা আনতে বলা হচ্ছিল।খুব অসহ্য লাগে তার। পুলিশও তো তাদের মতোই মাসে মাসে বেতন পান , তাহলে কেন তাদের এই হীন প্রবৃত্তি ? এই প্রবৃত্তি দেখে সমাজের একটা বড়ো অংশের কাছে পুলিশ আজও ঘৃণার পাত্র হয়ে উঠেছে।রাগে পুলিশগুলোর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তিনি। মনটাকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য আদালত শুরু হওয়ার প্রতীক্ষায় মনে মনে ছোট বেলার মতো এক - দুই গুনতে থাকেন। সম য়টাকে বড়ো দীর্ঘ মনে হয়। সেই কাল থেকে মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা চেপে বসে আছে।কি হবে কে জানে ? ছেলেটাকে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন তো ? আরও নানা চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন মনোতোষ। সেই সময় কালকের মতোই নারায়ণবাবু তাদের আদালত কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। ততক্ষণে খাঁচায় এনে ঢোকানো হয়েছে সূর্যকে। উকিলবাবুরা এসে বসেছেন আদালত কক্ষে।  নির্ধারিত সময়ে বিচারকও এসে পৌঁছোন। তারপর একবার আদালত কক্ষের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে রায় ঘোষনা শুরু করেন। ধীর লয়ে তিনি  বলেন , এই মামলার সমস্ত নথিপত্র দেখে আমি এই  সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে , অভিযোগের স্বপক্ষে পুলিশ কোন তথ্য প্রমাণই হাজির করতে পারে নি। উল্টে যাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল ,  তিনি নিজে আদালতে সেই অভিযোগ মিথ্যা বলে হলফনামা দিয়েছেন। এরপর এই মামলা চালানোর যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না। তাই অভিযুক্তকে স্ব-সম্মানে মুক্তির পাশাপাশি এই মামলা খারিজ ঘোষণা করা হল। একই সঙ্গে কেন একজন স্কলার প্রাইমারি স্কুলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না , কারাই বা উত্তীর্ণ হয় তা খতিয়ে দেখার জন্য দশ সদস্যের একটি বিচার বিভাগীয় কমিটি গড়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। স্কুল কলেজের  ৬ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং প্রাক্তন বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত হবে ওই কমিটি। এই মামলায় অভিযুক্ত যে সেন্টারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন সেই সেন্টারের সমস্ত প্রার্থীদের খাতা বাজেয়াপ্ত করে খতিয়ে দেখা হোক। তারপর কমিটির নির্দেশ মাফিক তৎক্ষণাৎ যোগ্যদের নিয়োগ আর অযোগ্যদের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিচ্ছে এই আদালত। একই সঙ্গে অযোগ্যদের নিয়োগ প্রত্যাহার এবং যোগ্যদের হাতে হাতে নিয়োগ পত্র দেওয়ার জন্য কমিটির নির্ধারিত দিনে  সমস্ত কাগজ পত্র সহ স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যানকেও নিদিষ্ট স্থানে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। 




                   রায় ঘোষণা শেষ করে নিজের কক্ষে ফিরে যান বিচারক। আর আদালত কক্ষের বাইরে এসে অভিনন্দন এবং উচ্ছাসের বন্যায় ভেসে যান মনোতোষরা। সবাই বলাবলি করে , আপনাদের জন্যই এই যুগান্তকারী রায় পাওয়া সম্ভব হল। এবার দেখুন না , ঠক বাছতে কেমন গাঁ উজার হয়ে যায়। দেশটাকে পাল্লা দরে বিক্রি করে দিল সব। চোর-ডাকাতগুলোকে ছেড়ে দিয়ে ওইসব দুর্নীতিবাজ নেতা মন্ত্রীগুলোকে জেলে ঢোকানো উচিত। চোর ডাকাতে আর কতটুকু চুরি করে ? ও ব্যাটারা যে পুকুর চুরি করে।
সারা আদালত চত্বরে সেদিন শোনা যায় শুধু ওই জাতীয় কথাবার্তা। সব দেখেশুনে মনোতোষ মনে মনে ভাবে মানুষের মনে এত ক্ষোভ জমা ছিল ? এত মানুষ বঞ্চনার আগুনে জ্বলছিলেন ? ওইসব মানুষের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করেন তিনি। আইনী কিছু প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পর ছাড়া পায় সূর্য। ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। তাদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে সুস্মিতা আর ছন্দাও।আদালতের উৎসুক মানুষজন ঘিরে ধরে তাদের।সবাই সান্ত্বনা দেন ওদেরকে। সেই সান্ত্বনাকে পাথেয় করে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে আসেন ওরা। ঠিক হয় একবার ভোম্বলকাকাদের বাড়িতে দেখা করে সেই দিনই বাড়ি ফিরে যাবেন মনোতোষরা।সেই মতো একটা গাড়ি ভাড়া করে প্রথমে ভোম্বলকাকার বাড়িতে পৌঁছোন তারা সবাই। সেখানে তখন সঞ্জয়ও ছিল।সবার কাছে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠতে যাওয়ার আগে ভোম্বলকাকা ছন্দার হাতে হারটা ফিরিয়ে দিয়ে বলেন , এটা রাখো।তীব্র আপত্তি জানিয়ে ছন্দা বলে , না না সে কি, কেন ? আপনার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। হারটা বিক্রি করে সেই টাকাটা নিতে হবে তো।
---- সে তো নিতেই হবে। আমি সব লিখেও রেখেছি। দেখলাম হার বিক্রি করে সব টাকা মিটবেও না। তাছাড়া শুধু আসল টাকা দিলেই তো হবে না। আমি কি এমনি এমনি টাকা দিয়েছি ?  সুদও দিতে হবে যে। তাই আমি এক দিন সময় সুযোগ মতো গিয়ে সে সব নিয়ে আসব। আপাতত তুমি এটা নিয়ে যাও তো। 
বলেই হারটা তার হাতে দিয়ে মুঠো বন্ধ করে দেন। হার বিক্রি করে টাকা শোধ না হওয়ার কথা তো নয়। সুদের কথাও যে ঠিক নয় তা বুঝতে অসুবিধা হয় না ছন্দার।আসলে তার হার বিক্রি আটকাতেই ভোম্বলকাকা ওই অজুহাত খাড়া করেছেন। হার বিক্রিটা এই ভাবে আটকে দেওয়ায় মনে মনে ছন্দা খুশীই হন। হারটার সঙ্গে তার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেই কবে বিয়ের আগে শাশুড়িমা তার শাশুড়ি মায়ের কাছে থেকে পাওয়া হারটা তার গলায় পড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেটা রক্ষা করে ভোম্বলকাকা আবার তাকে ঋণী করলেন।  




                              ভোম্বলকাকার কাছে তাদের ঋণ বেড়েই চলছে। যত দ্রুত সম্ভব সেই ঋণ মেটানোর চেষ্টা করবেন ছন্দা।কিন্তু সব ঋণ কি সত্যিই মেটানো যায় ? টাকার মূল্যে তো সব ঋণ বিবেচিত হয় না। বিপদের দিনে ভোম্বলকাকা - সঞ্জয় যে ভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন , সেই ঋণ কি কোনদিন মেটাতে পারবেন ? সেই কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে তার চোখে জল চলে এসেছিল তা টের পান নি ছন্দা। কিন্তু ভোম্বলকাকার সেটা চোখ এড়ায় না। কাছে এসে বলেন , আবার কান্না কিসের ? কান্নার দিন তো শেষ। হাসি মুখে বাড়ি যাও। শীঘ্রই আমরা তোমাদের সেই হাসির হাটে যোগ দিতে যাচ্ছি।গাড়িটা আস্তে আস্তে ভোম্বলকাকাদের বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। রাস্তাতেই পড়ে রুম্পাদের বাড়ি।তাদে র বাড়ির দরজার কাছে পৌঁছোতেই আশ্চর্য হয়ে যান ছন্দা। গাড়ি থেকেই দেখতে পান দরজার সামনে যেন তাদেরই প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে রূম্পাদি আর  প্রভাতদা।  দরজার কাছে পৌঁছোতেই হাত দেখিয়ে গাড়িটা দাঁড় করায় তারা। বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকান ছন্দা। গাড়ির জানলার কাছে এগিয়ে এসে রুম্পা বলে , সঞ্জয়ের মুখে সব শুনলাম। খুব ভাল লাগছে। আজকের দিনটা আমাদের বাড়িতে থেকে গেলে হত না ?
রুম্পার কথা শুনে গায়ে জ্বালা ধরে যায় ছন্দার।সঞ্জয়ের মুখে সূর্যর বেকসুর খালাস পাওয়ার কথা শুনেই থেকে যাওয়ার কথা বলতে এসেছে। সেদিন যখন তারা মা মেয়ে অসহায়ের মতো ছুটে এসেছিল তখন চাকরির কথা ভেবে তাদের থাকতে বলা দূরের কথা , বাড়ির ভিতরে যেতে পর্যন্ত বলে নি। ইচ্ছে করে, সেই প্রসঙ্গ তুলে আচ্ছা করে দু' কথা শুনিয়ে দেন। কিন্তু বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করেন। ছেলেমেয়েদের সামনে মেজাজ হারাতে চান না। তাছাড়া যা হয়ে গিয়েছে তা তো আর ফেরত পাবেন না। তাহলে বৃথা কটু কথা বলেই বা কি লাভ ? সেই জন্য স্বাভাবিক গলায় বলেন ,  না গো আজ আর সময় হবে না। আজ কুড়ি দিনের উপর বাড়ি ছাড়া। ওদিকে কি হচ্ছে কে জানে ? পরে কখন এলে না হয় আসব। গ্রামে গেলে তোমরা যেও যেন আমাদের বাড়িতে। 
রুম্পাদিরা আর কোন কথা বলতে পারে না , যেন পালিয়ে বাঁচে।সূর্যের বেকসুর খালাসের কথা শুনে হয়তো শেষ মুহুর্তে বিবেকের তাড়নায় থাকার কথা বলতে এসেছিল , কিন্তু তারা থাকলে যে কিছুতেই অস্বস্তি এড়াতে পারবে না তা রুম্পাদিরা ভালো করেই জানে। ছন্দারাও কি স্বাভাবিক হতে পারতো ?  একবার তাল কেটে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে আগের সুরে  ফেরা যায় না। তাই পরে আসব বলে চলে আসতে হল।রু ম্পাদিদের বাড়িতে তারা আর কোন দিন পা রাখবে না সেই প্রতিজ্ঞা সেইদিনই করেছিলেন ছন্দা। তবে ওরা যদি কোনদিন তাদের বাড়ি যায় তাহলে কোন রকম অমর্যাদাও করবেন না।বাড়ি ফিরেই রাতে খাওয়ার পর সবাই একসঙ্গে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসেন। সেখানেই এক গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন মনোতোষ।

                            ( ক্রমশ )


নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


 দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস ------

                                    ( ১ )
  

                                  
                               

                             ( ২) 





                                       

                       ( ৩ )

                                       
                            


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  

                      ( ৪ )

            



                          ( ৫ )

                                 ( খেলার বই )
         

                                                                                 


                 ----০----

No comments:

Post a Comment