Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কালের কারিগর -- ৬৬






     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



         শুরু  হল  ধারাবাহিক উপন্যাস -- 











             কালের কারিগর
              


                          অর্ঘ্য ঘোষ

                       (  কিস্তি ---- ৬৬ ) 



শুধু বিচ্ছু দুটোকে তার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির হাসি হাসতে দেখে মনোতোষ।  ছেলেমেয়ে দুটো অমনিই। সুযোগ পেলেই তাকে নিয়ে রঙ্গরসিকতা করবে। যেন বাবা নয় বন্ধু। অবশ্য ছেলে মেয়েদের বন্ধু হতে পারাটা একজন বাবার কাছে কম বড়ো ব্যাপার নয়। তাছাড়া মায়ের আদরের জন্যও ওদের কিছু বলতে পারেন না মনোতোষ। অবশ্য কিছু বলার মতো ছেলে মেয়ে ওরা নয়। ছেলেটা তো তার মতোই বরাবর ক্লাসে প্রথম হয়। মেয়েটা অতটা ভালো না হলেও ৭/৮ জনের মধ্যেই তার নাম থাকে।এক বছরের ব্যবধানে ওরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।তাই ওদের নিয়ে সন্ধ্যার দিকটা একটু বসতে শুরু করেন মনো।সকালের দিকে আলাদা করে বসার সুযোগ হয় না।ওই সময় তাকে আরও অনেক ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসতে হয়।  টিউশানি করেন না মনোতোষ, কিন্তু বাবর মতোই নাইন- টেনের ছেলেমেয়েদের  তিনি বিনা বেতনে পড়ান সকালবেলা। পড়তে আসার বাধ্যবাধকতা অবশ্য কিছু নেই। যাদের ইচ্ছা হয় তারা আসে , যাদের টাকা দিয়ে অন্যত্র পড়ার সামর্থ্য আছে তাদের কেউ কেউ অন্য শিক্ষকের কাছে পড়ে। তবে ঝোঁকটা মনোতোষের দিকেই বেশি। একে পড়তে পয়সা লাগে না , তার উপরে কোচিং- এ পড়া ছেলেমেয়েরা তুলনামূলক হারে বিজ্ঞান বিভাগে বেশি নম্বর পায়। এজন্য যেসব শিক্ষক টাকা নিয়ে পড়ান তাদের চক্ষুশূল হয়ে পড়েছে মনোতোষ। কিন্তু সে সব অগ্রাহ্য করে কোচিং ক্লাস চালিয়ে যান তিনি। সেখানে একসাথে তার ছেলেমেয়েরাও পড়ে। তাদেরও তো নাইন-টেন চলছে। কোচিংয়ে আসে রজত আর শ্রাবন্তীও। সৌমেন আর রীনার কথা ভেবে তাদের মেয়ে শ্রাবন্তীকে পড়ানো নিয়ে তার একটু দোটানা ছিল।ছন্দা কি ভাববে কে জানে ? কিন্তু বাবা-মা কবে কি করেছেন তার দায় তাদের মেয়ের উপরে চাপিয়ে দেওয়া কিছুতেই সমীচীন বলে মনে হয় না মনোতোষের , বিশেষ করে পড়াশোনার ক্ষেত্রে তো নয়ই।মেয়েটিকেও তার খারাপ লাগে না। সেই ছোটবেলা থেকেই তো তাদের বাড়ি আসা যাওয়া করে। ছন্দাও ছেলে মেয়েদের সঙ্গে মেয়েটির মেলামেশায় আপত্তি করে না। তাই তিনিও অন্যান্যদের মতোই শ্রাবন্তীকে কোচিংয়ে স্থান দেন। কোচিংয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর পাশাপাশি সকলকেই আলাদা আলাদা হোম ওয়ার্ক দেন মনোতোষ। হোমওয়ার্ক না হলে বকাও দেন তিনি। সেই ভয়ে সকলেই কম বেশী হোমওয়ার্ক করে আনে। শ্রাবন্তীই কেবল প্রায় দিনই হোমওয়ার্ক করে আনতে পারে না। আসলে ওরা প্রচুর বড়োলোক হলেও বাড়িতে লেখা পড়ার চর্চা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই কোচিংয়ে এসেই তার দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। বকুনি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে সে সূর্যকে ধরে। সূর্য শুধু কোচিংয়েই নয় , স্কুলেরও সেরা ছাত্র।পড়াশোনায় কেউ আটকে গেলে তার সাহায্য নেয়।এমন কি শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে মাঝে মধ্যে নিচু ক্লাসে তাকে ক্লাস নিতেও পাঠানো হয়।তাই বাবা কোচিং-এ বসার আগে শ্রাবন্তী সূর্যকেই বলে , ও সূর্যদা হোমওয়ার্কটা একটু বলে দাও না। না হলে আজ আবার বকা খাব।
---- খাবি তো খাবি। তোর বকা খাওয়াই ভাল। রোজ রোজ হোমওয়ার্ক করে আনিস না কেন ? 
---- একা একা পারি না যে। আর আমাদের বাড়িতে দেখিয়ে দেওয়ার তো কেউ নেই। বাবা-দাদু সকালেই খাদানে চলে যায়। মাকে বলেও লাভ হয় না।




                    সমস্যাটা উপলব্ধি করে সূর্য। সত্যিই তো সবার বাড়িতে আটকে গেলে দেখিয়ে দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। তার  তো যখনই কোথাও আটকে যায় তখনই বাবার সাহায্য পায়। সেই কথা ভেবেই সে আর হাত গুটিয়ে থাকতে পারে না। তাই বলে , কই দেখা কোথায় আটকে গিয়েছিস দেখি। 
তারপর শ্রাবন্তীর আটকে যাওয়া হোমওয়ার্ক শেষ করতে সাহার্য করে সে। আর বাবার বকুনি থেকে রেহাই পেয়ে হাসি ফুটে ওঠে শ্রাবন্তীর মুখে। মিস্টি হেসে সূর্যকে বলে --- থ্যাংক ইউ।
কপট রাগ দেখিয়ে সূর্য বলে, হোমওয়ার্ক পারে না আবার বলা হচ্ছে থ্যাংক ইউ। কই থ্যাংক ইউ বানান বল দেখি ? 
বার কয়েক তো তো করেও নির্ভুল বানানটা বলতে পারে না শ্রাবন্তী। তখন তার কাছ থেকে একটা খাতা টেনে নিয়ে বানানটা লিখে দিয়ে সূর্য বলে , কাল এটা মুখস্থ করে আসবি। আর এখন থেকে প্রতিদিন একটা করে ইংরাজি বানান দেব। সেটা মুখস্থ করে এলে তবেই হোম ওয়ার্ক বলে দেব। নাহলে খাবি বাবার বকুনি।
কথাটা শুনেই জ্বরের রুগীর  মতো গলা করে শ্রাবন্তী বলে --- বাবা প্রতিদিন ?
--- হ্যা প্রতিদিন।
ওই ভাবেই দুটি মন কখন যেন একে অন্যের দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করে দেয় তা ওরা টের পায় না। ওদের শুধু মনে হয় কি যেন নেই , কি যেন চাই , কি যেন হারিয়ে ফেলার ভয় দিনরাত।কিন্তু সেটা যে কি তা স্পষ্ট ভাবে কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। কিন্তু শ্রাবন্তী কোচিংয়ে না এলে সূর্যর মনটা উদাস হয়ে থাকে। সেই রকমই হঠাৎ যদি কোনদিন শ্রাবন্তী কোচিংয়ে না আসে তাহলে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে সূর্য।তাদের কো-এড স্কুল হলেও মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের  আলাদা করে কথা বলার চল নেই। সে ইজন্য নিজে যে জিজ্ঞেস করবে তার উপায় নেই। তাই সে  বোনকে বলে , আজ মনে হয় বানান মুখস্থ করতে পারে নি। তাই হোমওয়ার্ক করে দেব না বলে আসে নি। বোকা মেয়ে একটা। আরে মুখে বলেছি বলে কি আর সত্যি সত্যি করে দিতাম না নাকি ? একবার জিজ্ঞেস করে দেখিস তো  কি বলে ? 
দাদার ভাবগতিক যেন কেমন কেমন লাগে সুস্মিতার। মাথা নাড়িয়ে বলে ,  আচ্ছা স্কুলে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখব।
তাকে জিজ্ঞেস করতে হয় না। শ্রাবন্তীই যেন দাদার খবর নেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল। টিফিনের সময় একা পেয়ে তাকে  জিজ্ঞেস করে ,  হ্যা রে আজ আমি যায় নি বলে সূর্যদা আমার কথা কিছু বলছিল ?
---- বলছিল আর কোনদিন তোর হোমওয়ার্ক করে দেবে না।
---- যাঃ  তাহলে যে আর আমার কোচিংয়েই যাওয়া হবে না।
---- যাবি না। তোর বাবার কি টাকার অভাব আছে ?  টাকা দিলে কতজন তোদের বাড়িতে গিয়ে পড়িয়ে দেবে।
---- তাদের কাছে পড়তে আমার ভালো লাগবে না। আমার স্যারের কোচিংয়েই পড়তে ভালো লাগে।
---- দাঁড়া দাঁড়া , তোর চোখ মুখ অন্যকথা বলছে মনে হচ্ছে।
---- অন্য কথা মানে ? 
--- মানে তোর মুখের ভাব কিন্তু অন্যকথা বলছে। সত্যি বলতো দাদার প্রেমে পড়িস নি তো ? ওদিকে তো আর একজনের মনও উড়ু উড়ু ভাব। 
---- ধ্যাত , কি যা তা বলছিস ?
এবার বান্ধবীর হাত দুটো ধরে সুস্মিতা বলে , কই আমার চোখে চোখ রেখে বল তো কিছু নয়।
এবারে আর পুরোপুরি অস্বীকার করেতে পারে না শ্রাবন্তী।আমতা আমতা করে বলে , সূর্যদাকে দেখে আমার কেমন যেন হয়ে যায়। বুকের ভিতরটা গুড় গুড় করে। 
---- বুঝেছি , মরেছো আর কি। চালিয়ে যাও গুরু। আমি পাশে আছি। 
তারপর বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে বলে, তাবলে একটা কথা আগে থেকেই বলে রাখছি, দাদার সঙ্গে বিয়ে হলেও আমি কিন্তু তোকে বউদি বলতে পারব না। তুমি তুমি ও বলতে পারব না। নাম ধরেই তুইতোকারি করব।
---- যাঃ কি যে বলিস। বলে লজ্জা ঢাকে শ্রাবন্তী।




                                               সেদিন দাদাকে নিয়েই গল্প করতে করতে বাড়ি ফেরে তারা। দাদাও সেদিন বিকালের দিকে তাকে একা পেয়ে শ্রাবন্তী কথা তোলে। স্কুল থেকে ফিরলে দাদা যে তাকে শ্রাবন্তীর কথাই জিজ্ঞেস করবে সে আভাস সে সকালে দাদার ব্যগ্রতা দেখেই আন্দাজ করেছিল। তাই সে গলায় উদ্বেগ ঝড়িয়ে বলে , জানিস তো শ্রাবন্তী আর কোচিংয়ে আসবে না। ওর বাবা নাকি একটা ভালো মাস্টার ঠিক করে দিয়েছে। সেই মাস্টারই এখন ওকে বাড়িতে পড়িয়ে যাবে।
কথাটা শুনেই যেন মুসড়ে পড়ে দাদা। কিন্তু বোনেকে সেটা বুঝতে দিতে চায় না সে। তাচ্ছিল্যের ভাব দেখিয়ে বলে , ওর কিচ্ছু হবে না। কেউ পারবে নাকি বাবার মতো পড়াতে ? মাধ্যমিকে ঠিক ডিগবাজি খাবে দেখিস।
---- খাবে তো খাবে। তুই অত দুশ্চিন্তা করছিস কেন ? ওর বাবা যেটা ভালো বুঝেছেন সেটা করেছেন।
সূর্য কপট উদাসীনতা দেখিয়ে বলে -- না , আমার দুশ্চিন্তা কিসের ? 
----- কিন্তু তোর মুখ তো সে কথা বলছে না দাদা ! মর্ম বেদনায় বুক ফেটে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা কি ? 
---- ব্যাপারটা কি মানে ? 
---- সেই যে বলে না '  সিংকিং, সিংকিং, ডিংকিং ওয়াটার।'
---- যা কি ভুল ভাল বলছিস ? 
---- ভুল ভাল বলছি ? সত্যি করে বলতো দাদা শ্রাবন্তীর সঙ্গে তোর কি সম্পর্ক ? 
---- কি সম্পর্ক আবার ? কিছুই নয়।
---- বললেই হবে ? তোদের চোখের ভাষাই অন্য সম্পর্কের আভাস দেয়।শ্রাবন্তীকে দেখি তোর সব ব্যাপারেই খুব আগ্রহ। ও কোচিংয়ে আসবে না শুনে তোর ও মন মরা ভাব। 
----তা আমি কি করে বলব। সেটা ওকেই জিজ্ঞেস করিস। আর আমার তো খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই  কে আসবে না , আসবে বলে মনমরা ভাব হতে যাবে।
--- অঃ তাই বুঝি ? তাহলে আসল কথাটা বলে দেখি কি হয় ? 
--- কি আসল কথা ? 
--- আসল কথা হলো আজ ওর দিদিমা এসেছে বলে শ্রাবন্তী কোচিংয়ে আসতে পারে নি। কাল থেকে আবার আসবে।
---- তবে মিথ্যা কথা বললি কেন ? 
---- নাহলে যে তোমার মনের ভাবটা ধরতে পারতাম না। ওর কথা শুনে মনে যে আর খুশী  ধরছে না মনে হচ্ছে। 
আর বোনকে এড়াতে পারে না সূর্য।  মনের মধ্যে শ্রাবন্তীকে ঘিরে যে আলাদা একটা আর্কষণ গড়ে উঠেছে তা অস্বীকার করতে পারে না সে। সেটা তার মুখ চোখের ভাবেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। 
তাই বোনের হাত ধরে সে বলে , লক্ষ্মী বোনটি আমার। কথাটা যেন বাবা মায়ের কানে না ওঠে দেখিস।সুস্মিতা হাতটাকে বরাভয় দেওয়ার কায়দায় তুলে বলে --- তথাস্তু।
কিন্তু কথাটা কানে তুলতে হয় না। বিষয়টা নজর এড়ায় না ছন্দারও। একদিন তাই নিয়ে স্বামীর সঙ্গে মজা করতে ছাড়ে না সে। একান্তে পেয়ে মনোতোষকে বলে , কি গো তোমার মনের মতলব খানা কি বলতো ? 
---- মতলব ? 
--- ওই যে আমাকে কিছু না বলে রীনার মেয়েটাকে পড়াতে শুরু করে দিলে। এখন তো আবার দেখছি ছেলেও সেই মেয়েটার দিকে ঢলে পড়েছে। ছেলেকে সিঁড়ি করে কি তোমার পুরনো প্রেমিকার কাছে পৌচ্ছোতে চাও বুঝি ?
---- ধুৎ , কি যে বলো না তুমি। আমার প্রেমিকা তো এক এবং অদ্বিতীয়ম তুমি।
স্ত্রীকে কাছে টেনে নিয়ে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেন তিনি। স্ত্রীকে আদর সোহাগে ভরিয়ে দেন। ছন্দাও স্বামীর বুকে মুখ ডুবিয়ে দেন।

                                       ( ক্রমশ )



নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


 দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস ------
  

                                    ( ১ ) 
                                  


                             ( ২) 





                                       

                       ( ৩ )

                                       
                            


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  

                      ( ৪ )

            



                          ( ৫ )

                                 ( খেলার বই )
         

                                                                                 


                 ----০---




No comments:

Post a Comment