Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কালের কারিগর -- ৬৭





     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



         শুরু  হল  ধারাবাহিক উপন্যাস -- 











             কালের কারিগর
              


                          অর্ঘ্য ঘোষ


                        ( কিস্তি --- ৬৭ ) 



ছন্দাও স্বামীর বুকে মুখ ডুবিয়ে দেয়। বুকে মুখ রেখেই সে বলে , সবই ঠিক আছে। কিন্তু শ্রাবন্তী বড়ো লোকের বাড়ির একমাত্র সন্তান। তার বাবা--মা জানার পর কোন সমস্যা হবে না তো ? 
---- সমস্যা হওয়ার তো কথা নয়। বড়ো লোকরা মেয়ের পাত্র হিসাবে ভালো লেখা পড়া জানা ছেলেদেরই পচ্ছন্দ করে।
---- সে আর বলতে। তোমাকে নিয়েই রীনার বাবা কম ঝোলাঝুলি করেছিলেন। নেহাৎই কাকু আর কাকীমা ছিলেন বলেই না রণে ভঙ্গ দিতে হয়েছিল।
--- আর আমার বুঝি কোন ভূমিকা ছিল না ? 
---- তোমার আবার ভূমিকা কি মশাই ? তোমাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই ঝুলে আছো।
--- বাহ্ মেয়েদেরকেই ছেলেদের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয় শুনেছি। এ যে উল্টো  দেখছি।
---- উল্টোই তো। তুমি কি আর পাঁচ জনের মতো ?
---- তাই ? 
----- হ্যা গো তুমি আমার অহঙ্কার। আমি তো গরীবের ঘরের মেয়ে। তাই ধন দৌলতের চাইতে তোমার মতো স্বামী পাওয়া আমার কাছে ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু শ্রাবন্তীর মতো মেয়েরা তো সোনার থালায় খায় , দুধে আঁচায়। কি জানি কি হবে ?  তাছাড়া সামনেই সূর্যর পরীক্ষা। এর মধ্যেই প্রেম রোগে ধরলে পরীক্ষার ক্ষতি হবে কিনা কে জানে ?
---- অত ভাবছ কেন ? সূর্য তো তোমার আমারই সন্তান। ওর থেকে কম বয়সে আমাদের প্রেমরোগে ধরেছিল। তারপরেও যখন আমার রেজাল্ট খারাপ হয় নি তখন সূর্যরও হবে না দেখো।
বাস্তবিকই যথাসময়ে বাবার মতোই ভালো নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করে সূর্য। সেও মেধা তালিকায় স্থান দখল করে নেয়। মনোতোষের কোচিংয়ের ছেলেমেয়েরাও সবাই ভালো ভাবেই পাশ করেছে। কেবল রজত কোনরকমে টেনেটুনে পার হয়েছে। তার ওই রেজাল্ট প্রত্যাশিতই ছিল। শেষের দিকে খুব ফাঁকিবাজি শুরু করেছিল রজত। মনোতোষ তাকে বার বার বলেও শোধরাতে পারেন নি। সেই জন্য খুব খারাপ লাগে মনোতোষের। রজতের খারাপ রেজাল্টের দায় যেন তারই। বিশেষ করে রজত তার সহপাঠী বন্ধু রাজীব আর ছন্দার গঙ্গাজল খুঁকীর ছেলে। তার কাছে অবশ্য সব ছেলে মেয়েই সমান। কিন্তু বাপের বাড়ি গিয়ে ছন্দাকে কখনও তার গঙ্গা জলের কাছে বিরূপ মন্তব্য শুনতে হবে কিনা কে জানে ! ছন্দা অবশ্য স্বামীর নিন্দা শোনার পাত্রী নয়। তার নিন্দা করলে সে'ও যে দু'কথা শুনিয়ে দিতে ছাড়বে না তা ভালোই জানেন মনোতোষ। কিন্তু সে রকম কিছু হলে ওদের মেয়ে বেলাকার সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে। ছন্দাকে অবশ্য এই আশঙ্কার কথাটা বলা হয় না তার। সে যেদিন যা হওয়ার হবে। এখন থেকে তা নিয়ে স্ত্রীকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে চান না তিনি। বরং ছেলের ভর্তি নিয়ে ছন্দার সঙ্গে আলোচনা করেন  তিনি। সূর্যকে গ্রামের স্কুলেই ভর্তি করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথ মদিকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করানো নিয়ে কিছুটা খুত খুতানি ছিল মনোতোষের। এবারেই বিজ্ঞান বিভাগ চালু করার অনুমোদন পেয়েছে তাদের স্কুল। এখনও ল্যাবরেটরি সহ অন্যান্য পরিকাঠামোই সেই ভাবে তৈরি হয় নি। তাই সূর্যকে প্রথমে রামপুরহাটেই ভর্তি করার কথা ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা করলে তার বড়ো ভুল হত। ছন্দাই তার সেই ভুলটা ধরিয়ে দেয়। তার সিদ্ধান্তের কথা শুনে ছন্দা বলে , তুমি যে স্কুলে শিক্ষকতা করছ সেই স্কুলের পরিবর্তে নিজের ছেলেকে যদি বাইরে ভর্তি কর তাহলে অন্যান্য অভিভাবকেরা কোন ভরসায় তোমাদের স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করবে ? স্কুলের মাস্টারমশাইরাই বা কি বলবেন ? তাছাড়া তুমি তো রয়েছো। স্কুলের ঘাটতিটুকু তুমিই পূরণ করে দেবে। অকাট্য যুক্তি। তার উপরে নাতিকে বাইরে পড়তে পাঠানোর ব্যাপার বেকে বসেন সাধনাও। ছন্দা জন্ম দিতে পারেন , কিন্তু ছেলেমেয়ে দুটোকে প্রকৃত লালন পালন করেছেন তাদের ঠাকুমা। আজ তিনি তাদের চোখে হারান। নাতি-নাতনিদের যেমন ঠাকুমায়ের পাশে না শুলে ঘুম আসে না। ঠাকুমাও তেমনি ওদের না দেখে থাকতে পারেন না। তাই মায়ের আপত্তি আর ছন্দার যুক্তি মেনেই ছেলেকে নিজের স্কুলেই ভর্তি করে দেন মনোতোষ।



                                            ওদের ক্লাস পুরোদ্যমে শুরু হতে না হতেই এসে পড়ে সুস্মিতাদের মাধ্যমিক পরীক্ষা। সেই জন্য মাঝে মধ্যে বোনকে একটু দেখিয়ে দেয় সূর্য।চলে আসে শ্রাবন্তীও।তাই দেখে একদিন সুস্মিতা মজা করে বলে ,  তুই তো মহা হিংসুটে আছিস। দাদা আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছে তা বুঝি তোর সহ্য হচ্ছে না ? অমনি ভাগ নিতে হাজির হয়েছিস ? সুস্মিতা  যে তার সঙ্গে মজা করছে তা বুঝেতে অসুবিধা হয় না শ্রাবন্তির। তাই সেও ছদ্ম অভিমান প্রকাশ করে বলে ,  বেশ ভাই তোমাদের ভাই বোনের মাঝে আসাটা আমার অন্যায় হয়ে গিয়েছে।আর কোনদিন আসব না , এই আমি চললাম। বলে চলে যাওয়ার ভান করতেই সুস্মিত তার হাত দুটো ধরে বলে , কেন মিছে রাগ করছিস ভাই। কে কার ভাগ নিচ্ছে তা সময়ই বলে দেবে। তার কথা শুনে লজ্জারুণ হয়ে ওঠে শ্রাবন্তীর মুখ।দুই বান্ধবীর এমন অম্লমধুর রসালাপ মাঝে মধ্যে বেশ ভালোই উপভোগ করে সূর্য। ওই ভাবেই বেড়ে ওঠে তাদের ঘনিষ্ঠতা। সুস্মিতাই বিভিন্ন ভাবে তাদের মেলা মেশার সুযোগ করে দেয়। কালীপুজোর দিনও তারা সুস্মিতার জন্যই একান্তে কথা বলার সুযোগ পায়।কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না বলেই বোধ হয় সেই সুযোগ উপভোগ করতে পারে নি। সেদিন ছিল দক্ষিণাকালী পুজোর দিন। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র - ছাত্রীরা ওই পুজোর আয়োজন করে। পুজোর পর ছেলেমেয়েরা স্কুলে গিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রনাম করে আর্শিবাদ নিয়ে আসে।দীর্ঘদিন ধরেই তাদের স্কুলে ছেলেমেয়ের মধ্যে ওই রীতি প্রচলিত রয়েছে।তারাও করেছে।সরস্বতী পুজোর মতোই কালীপুজোর দিনটা  ছেলেমেয়েদের খুব আনন্দে কাটে। সেদিনও শাসন বারণ থাকে না বললেই চলে। ছেলেরা সেদিন যেন হঠাৎ করে স্বাধীনতার স্বাদ খুঁজে পায়। মেয়েরাও মা-পিসিদের কাপড় পড়ে পরিপাটি করে সেজে গুজে পুজো দিতে হাজির হয়। সেই মতো টেস্ট পরীক্ষার পর সুস্মিতাদের ব্যাচের ছেলেমেয়েরাও দক্ষিণাকালী পুজোর ব্যবস্থা করে। সুস্মিতা সাজ গোজ করতে করতে এসে পৌঁছোয় শ্রাবন্তি। ওরা একসঙ্গে মন্দিরে যাবে। সূর্য তখন নিজের ঘরে পড়ছিল। সেখান থেকেই শ্রাবন্তীকে মধুরিমার ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে সে। তাকে দেখে চোখ ফেরাতে পারে না সূর্য। এমনিতেই শ্রাবন্তী বেশ সুন্দরী। তার উপরে শ্যাম্পু করা চুল আর রঙিন শাড়ি পড়ে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। রোদে হেঁটে এসেছে বলে সারা মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। আলো পড়ে মুক্তো দানার মতো দেখাচ্ছে ঘাম বিন্দু গুলি। সেগুলি ছুঁয়ে দেখতে খুব ইচ্ছে হয় সূর্যর। পড়া ভুলে সে চেয়ে থাকে শ্রাবন্তীর দিকে। শ্রাবন্তী সুন্দর একটা ভ্রুভঙ্গি করে সুস্মিতার ঘরে ঢুকে যায়। সে'ও স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে। আজ শুক্রবার পুরো এক ঘন্টা টিফিন। কথা হয়ে আছে টিফিনের সময় সূর্য সাইকেল নিয়ে পৌঁচ্ছে যাবে সুরমতি নদীর ধারে। পুজো শেষে স্কুলে মাস্টারমশাইদের প্রনাম করে সরাসরি বাড়ি ফিরবে না শ্রাবন্তীও।সবাইকে এড়িয়ে তাকে নদীর ধারে পৌঁচ্ছে দিয়ে এক বান্ধবীর বাড়িতে অপেক্ষা করবে সুস্মিতা।তারপর টিফিন শেষের ঘন্টা পড়লে শ্রাবন্তীকে বাড়িতে পৌঁচ্ছে দিয়ে ফিরবে সে। পুরো প্ল্যানটা অবশ্য সুস্মিতার। কিন্তু তাদের বোধ হয় বিধিবাম। নাহলে এমন হয়' ? এমনিতে এই সময় নদীর ধারে কেউ বড়ো একটা যায় না। সেই সুযোগটুকু কাজে লাগাতেই নদীর ধারটি তারা বসেছে কি বসে নি , দূর থেকে চেনা মোটর বাইকের শব্দটা শুনে চমকে তাকায় শ্রাবন্তী।



                                       এ যে বুলেটের আওয়াজ। এ তল্লাটে বুলেট মোটর বাইক তো এক মাত্র তার বাবারই আছে। ওই বাইক নিয়েই বাবা সকালে পাথর খাদানে যায়। ফেরে সন্ধ্যায়। তাই নিশ্চিন্তেই নদীর ধারে সূর্যদার হাত ধরে বসেছিল সে। একবারও ভাবে নি এই সময় বাবা এ রাস্তা দিয়ে ফিরবে। তাই দ্রুত সেই সূর্যদার হাত ছেড়ে ছিটকে সরে আসে। কিন্তু বাবার চোখ এড়াতে পারে না। বাবার নজর তাদের উপরেই পড়ে। বাবা অবশ্য না দেখার ভান করে দ্রুত বাড়ির দিকে বাইক হাকিয়ে দেয়। তারাও আর মন বসাতে পারে না নিভৃতে আলাপ চারিতায়। বরং বাবার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য সূর্যদার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা চালায় শ্রাবন্তী। চুপিসাড়ে সে নিজের পড়ার ঘরের দিকে যেতে যেতেই শুনতে পাই বাবা মা কে বলছেন , তোমার মেয়েটাকে আজ মনো মাস্টারের ছেলেটার সঙ্গে দেখলাম। লোক জমে যাবে বলে আমি অবশ্য কিছু বলি নি। মেয়েকে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করে দিও। ওদের বাড়ি পড়তে যাওয়ার ও আর দরকার নেই।এই আশঙ্কাটাই করছিল শ্রাবন্তী।বাবা হাতে মারার লোক নন , বাবা মারেন ভাতে। সত্যিই যদি সূর্যদাদের বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কি হবে ?  
সেই সময় মায়ের গলা কানে আসে তার। কান খাড়া করে শুনতে পায় মা বলছেন, মেলামেশা করলে অসুবিধাটা কোথাই ? ছেলেটা যা রেজাল্ট করেছে তাতে বিরাট চাকরি বাকরি একটা কিছু পাবেই। ভাবো তো বিয়ের বাজারে ওই রকম একটা ছেলের কি রকম দাম ? মেয়েটাকে টোপ করে যদি গেঁথে তুললে পারি তা হলে মন্দ কি ?
বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলেন , কথাটা তুমি মন্দ বলো নি। আমাদের তো একটাই মেয়ে। বিয়ে দিয়ে যদি ঘরজামাই করে রাখতে পারি তবে মনোটার গুমোর ছুটি হয়ে যাবে।শিক্ষা আর নীতি-আদর্শের বড্ড অলঙ্কার আছে  তিন পয়সার মাস্টারটার।
---- তবে আর বলছি কি। সব চেপে যাও।
সৌমেনের মনে পড়ে যায় সেদিনকার সেই শিব মন্দিরের কথাটা। চোখের নীচে মনোর ঘুসি মারার সেই ক্ষতচিহ্নটা জনমদাগ হয়ে এখনও আছে। কাউকে কোনদিন আসল কারণটা বলতে পারেন নি। রীনাকেও না। তাই মনে মনে ভাবেন , মেয়েটাকে টোপ করে ওর ছেলেটাকে যদি ওদের কাছে থেকে ছিনিয়ে আনতে পারি তাহলে ক্ষতের জ্বালা কিছুটা তো কমবে। আর মায়ের কথা শুনে মনটা খুশীতে ভরে যায় শ্রাবন্তীর। মনে মনে মায়ের বুদ্ধির প্রশংসা না করে সে পারে না। সেও তো সূর্যদা পড়শোনাতে ভালো বলেই তার প্রেমে পড়েছে। পড়াশোনায় ভাল ছেলেগুলো ভাল চাকরি পায়। আর বেশির ভাগই বউয়ের আঁচল ধরা হয়। তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনে দিব্যি আয়েসে কাটানো যায়।নাহলে কি আর সে ওই রকম ঘরের ছেলের প্রেমে পড়ে ? 
রীনার মনে যেন জ্বলে ওঠে প্রতিহিংসার আগুন। ওই বাড়ি থেকে তাকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে চলে আসতে হয়ে ছিল। সেই অপমানের জ্বালা সে আজও ভুলতে পারে নি। তাই সে মেয়েকে সামনে রেখে সেই প্রত্যাখ্যানের জ্বালা মেটানোর ছক কষতে থাকে।

                             ( ক্রমশ )


নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


 দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস ------
  

                                    ( ১ ) 
                                  


                             ( ২) 





                                       

                       ( ৩ )

                                       
                            


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  

                      ( ৪ )

            



                          ( ৫ )

                                 ( খেলার বই )
         

                                                                                 


                 ----০---


No comments:

Post a Comment