Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

লুপ্তপ্রায় খেলা -- ৩৭



  


   
 ( শুরু হল হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন খেলা নিয়ে ধারাবাহিক লেখা  )



               লুপ্তপ্রায় খেলা
     
                     
 
 ( ছবি -সৌজন্যে লোকপাড়া সবুজকলি বিদ্যাপীঠ )



         ' হাই - ইস্কিরিম '


 
 'শালিক পাখি নমস্কার , 
  পা দুটি তোর পরিষ্কার 
   মাথাটি তোর কালো 
   বৌ'টি তোর ভালো।
   কুচি কুচি পেয়ারা , 
   কুচির কি চেহেরা 
   কুচি যখন পাকে 
   রাস্তার লোক দেখে 
   বিহায়ের মেয়ে হাট যায় 
   লাল রঙের জামা গায়।' 


মজার এই ছড়াটি প্রচলিত ছিল ' হাই-ইস্কিরিম ' খেলায় । খেলাটি মূলত প্রাইমারী স্কুল স্তরের ছেলেমেয়ের খেলতে দেখা যায়। ৮/১০ জন ছেলেমেয়ে একত্রে বা আলাদা - আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে। খেলার জন্য প্রথমেই পছন্দ সই পদ্ধতির মাধ্যমে একজনের ' মোর ' নির্ধারণ করে নেওয়া হয়। এই খেলায় ' মোর ' খাটা খুব কষ্টকর , তাই ' মোর ' হওয়াটা দুর্ভাগ্যের ব্যাপার বলে বিবেচিত হয়। খেলতে খেলতে অনেক সময় ' মোরধারীরা ' পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে।তখন ' আব্বা ' বা ' ওব্বো ' দিয়ে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয়।বেশিরভাগ খেলাতেই খেলতে খেলতে কারও কোন বিপদ আপদ , বাড়ি থেকে ডাক এলে , জল তেষ্টা কিম্বা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন হলে সে ঠোঁটের উপর হাতের তালু দিয়ে আলতো ভাবে চাপড়ে ' আব্বা ' বা 'ওব্বো ' বলে বিরতি নিতে পারে।আবার প্রয়োজন মিটে গেলে একই কায়দায় ' অাব্বা বা ' ওব্বো ' ছাড় বলে খেলায় ফিরতে হয়।



                                          ওই খেলার নিয়মানুযায়ী ,  মাটিতে দুই পা রেখে কার্যত হামাগুড়ি দেওয়ার মতো করে থাকতে হয়।আর বাকি খেলোয়াড়রা ক্রমান্বয়ে দুর থেকে ছুটে এসে তার পিঠের উপর হাতের ভর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে পার হয়। আর পার হওয়ার সময় ওইসব খেলোয়াড়রা ধারাবাহিক ভাবে উপরিউক্ত ছড়াটি আউড়াতে থাকে।কিন্তু ওইভাবে লাফ দিয়ে পার হতে ব্যর্থ হলে বা হাত বাদ দিয়ে শরীরের অন্যকোন অংশ ' মোরধারীর ' শরীর স্পর্শ করলেই তার ' মোর ' অনিবার্য।তখন কার্যত হাঁফ  ছেড়ে বাঁচে ' মোরধারী।' সে তখন খেলায় অংশ গ্রহণের সুযোগ লাভ করে।  
               
                                              
                        ----০----



                  ' ভোঁ রে ভোঁ ' 



একসময় কচিকাঁচাদের মধ্যে এই খেলাটির ব্যাপক প্রচলন ছিল। খেলাটি মূলত প্রশ্নোত্তর এবং অভিনয়ধর্মী খেলা। খেলাটি পুরোপুরি হারিয়ে না গেলেও চর্চা অনেক কমে গিয়েছে। ৮/১০ জন ছেলেমেয়ে একত্রে কিম্বা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে। খেলার জন্য প্রয়োজন পরিষ্কার মাঠ। মাঠের মাঝে ১০/১৫ ফুট দুরত্বের ব্যবধানে দু'দিকে দুটি সরলরেখা টানা হয়। কোথাও কোথাও অবশ্য খেলায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের বয়সের অনুপাতে দুরত্বের পরিমাণ বাড়ানোরও নিয়ম প্রচলিত আছে। দাগ দুটির মধ্যে একটি ভোঁ'য়ের ঘর অন্যটি দান দাগ হিসাবে পরিচিত। প্রথমেই পাতা ফুটিয়ে কিম্বা কোন একটি গণনা পদ্ধতির মাধ্যমে একজনের ' মোর ' নির্ধারণ করা হয়। খেলার পরিভাষায় ওই 'মোরধারী ' ভোঁ হিসাবে পরিচিত।অন্যান্য খেলায়  ' মোর ' হওয়াটা অপচ্ছন্দের হলেও এই খেলায় ' মোর ' হওয়াটা সৌভাগ্যের ব্যাপার হিসাবে বিবেচিত হয়। কারণ এই খেলায় অন্যান্য খেলোয়াড়দের 'মোরধারী ' তথা ভোঁ'য়ের হকুম তামিল করতে হয়।                



                                  ভোঁ নির্বাচনের পর  ' ভোঁ 'কে নিজের ঘরে এবং বাকি খেলোয়াড়দের দানঘরে  গিয়ে দাঁড়াতে  হয়।তারপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। দানঘরে দাঁড়িয়ে  খেলোয়াড়রা বলে - ভোঁ রে ভোঁ , জবাবে ভোঁ বলে , কি রে কি ?  তখন বাকি খেলোয়াড় জিজ্ঞেস করে - নদীর ঘাটে নৌকা লেগেছে , তুই নিবি কি ?  উত্তরে ভোঁ তার পচ্ছন্দ মতো বলে, উল্টো নৌকা , সোঁজা নৌকা , পাল তোলা নৌকা , হাল টানা , সিঁদুর পড়া , আয়না দেখা , বাঘ চলা , চুল বাঁধা , এক পায়ে ছোটা প্রভৃতি।তখন সমস্ত খেলোয়াড়কে ভোঁ'য়ের চাহিদা মতো কখনও  সোজা নৌকা অর্থাৎ উপরের দিকে বুক তুলে দুই হাত আর পা দিয়ে চতুস্পদ প্রানীর মতো , উল্টো নৌকা অর্থাৎ একটি পায়ের উপর একটি পা রেখে একই ভঙ্গিমায় নিজেদের ঘর থেকে ভোঁ'য়ের ঘর হয়ে ফের নিজেদের ঘরে ফিরতে হয়। দুটি ক্ষেত্রেই অবশ্য পা সামনের দিকে থাকে।তাই গন্তব্য পথ দেখার সুযোগ মেলে না। পালতোলা নৌকার ক্ষেত্রে একই ভঙ্গিমায় একটি পা উপরে তুলে পালের মতো রাখতে হয়। সেইসময় 'ভোঁ ' তার ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করে। তাই ওই সময় খেলোয়াড়দের খুব সতর্ক থাকতে হয়।কারণ ওই অবস্থায় নিজেদের জামা-প্যান্টের অংশ মাটিতে স্পর্শ করলে কিম্বা পা বা হাত নেমে গিয়ে নির্ধারিত ভঙ্গিমার পরিবর্তন ঘটলেই বিপদ। সেই সময় 'ভোঁ ' ছুঁয়ে দিলেই সেই খেলোয়াড়ের ' মোর ' হয়ে যায়। কিন্তু ভোঁ ছোঁওয়ার আগেই যদি কোন খোলোয়াড় নিজেকে সামলে নিয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরতে পারে তাহলে ' ভোঁ ' আর তাকে ছুঁতে পারে না।ওইভাবে সমস্ত খেলোয়াড় সফলভাবে নিজেদের ঘরে ফিরতে পারলেই ফের একই ভাবে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে পরবর্তী দান শুরু হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোঁ কাউকে ছুঁতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত একই প্রক্রিয়ায় খেলা চলে।                      


                           ------০-----

                               
                             ' কাঠি রেস ' 


' রিলে রেসের ' ছায়া রয়েছে ' কাঠি রেস ' খেলায় । একসময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে ব্যাপক প্রচলন ছিল খেলাটির।ওই খেলার মাধ্যমেই ছেলেমেয়েরা দৌড়ে পারদর্শিতা অর্জন করত বলে মনে করা হয়ে থাকে। সেইজন্য এই খেলায় অংশগ্রহণকারীদের অন্যান্য খেলার তুলনায় কিছুটা বেশি শারীরিক সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। চর্চার অভাবে ওই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।ছেলেমেয়ে একত্রে অথবা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে। খেলার জন্য প্রয়োজন ছোট্ট আকারের সমতল মাঠ। আর দুটি ছোট আকারের শক্ত কাঠি।


                                           খেলার প্রথমেই পছন্দ সই কোন পদ্ধতির মাধ্যমে সমান সক্ষমতা বিশিষ্ট দুটি দল গঠন করে নিতে হয়।তারপর দুই পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে ৩০/৩৫ ফুট দুরত্বের ব্যবধানে টেনে নেওয়া হয় দুটি সরলরেখা।দুটি দল সেই সরলরেখায় মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায়। সরলরেখায় দাঁড়ানো নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে তা টসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে নেওয়া হয়।দুটি দল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একজনকে দলপতি নির্বাচন করে নেয়।দুটি দলের দলপতিকেই নিজ নিজ ঘরের বাঁদিকে দাঁড়াতে হয়। এরপর দুই দলের দলপতিই কাঠি হাতে নিয়ে বিপক্ষের ঘর অভিমুখে ছুটতে শুরু করে। তারপর বিপক্ষের খালি ঘর স্পর্শ করে ছুটে নিজের ঘরে ফিরে তার ডান পাশে অবস্থানকারী পরবর্তী খেলোয়াড়ের হাতে কাঠিটি তুলে দেয়।পরবর্তী খেলোয়াড়ও একই কায়দায় বিপক্ষের ঘর ঘুরে এসে পরের জনের হাতে কাঠি তুলে দেয়। ওইভাবে যে দলের সমস্ত খেলোয়াড় বিপক্ষের ঘর ঘুরে এসে প্রথম নিজেদের ঘরে ফিরতে পারে সেই দল জয়ী ঘোষিত হয়।               



      ( চলবে )


         নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



    


                      --------০--------
                                                                                 
                                                                                       
                                   

2 comments: